করোনা পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতি কড়া চ্যালেঞ্জ, এই অবস্থা কেটে যাবে। সবাইকে একসঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। একইসঙ্গে সমস্ত রাজ্যের উদ্দেশ্যের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, লকডাউন হোক অন্তিম বিকল্প। অন্যদিকে যাতে লকডাউন করতে না হয় তারজন্য মঙ্গলবার সকালেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, মোদী থেকে যোগী, বিজেপি সরকার কেন লকডাউনের সম্ভাবনাকে খারিজ করছে?
সুপ্রিম কোর্টে যোগী সরকার
করোনার পরিস্থিতিতে সোমবার উত্তরপ্রদেশের ৫টি শহরে লকডাউন ঘোষণার কথা বলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু তাতে রাজি নয় যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং তাতে সফলও হয় তারা। এরপরেই শুধুমাত্র সপ্তাহান্তে কারফিউয়ের কথা ঘোষণা করেছে সরকার, একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে এখনই উত্তরপ্রদেশে লকডাউনের কোনও পরিকল্পনা নেই।
মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানাও লকডাউনের বিরুদ্ধে
করোনাকে রুখতে একদিকে যেমন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি লকডাউন লাগু করছে, অন্যদিকে তেমনই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি লকডাউন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উত্তরপ্রদেশে যেমন সপ্তাহান্তে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশে তেমনই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বেশকিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা কারফিউ নাম দেওয়া হয়েছে শিবরাজ সিং চৌহ্বানের সরকারের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহ্বান নিয়ে বলেছেন, লকডাউনের প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে হরিয়ানা সরকারও জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত লকডাউনের প্রয়োজন নেই, কড়াকড়ি ও সতর্কতা মাধ্যমেই করোনার সঙ্গে লড়াই করা যাবে।
কেন লকডাউন চাইছেন না মোদী?
দীর্ঘ লকডাউনের জেরে গতবছর বিরোধীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। একইসঙ্গে লকডাউনের জেরে চাকরি খোয়াতে হয়েছিল বহু মানুষকে। বিপদে পড়েছিলেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। আর হয়ত সেই কারণেই মোদী রাজ্যগুলিকে লকডাউন না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। একইভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলিও লকডাউন না করার জন্য বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে, আর এর নেপথ্যে তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
লকডাউনের জেরে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে
বিশিষ্ঠ সাংবাদিক সিদ্ধার্থ কলহংস জানাচ্ছেন, যোগী সরকার প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিল এবার লকডাইউন করা হবে না। সেক্ষেত্রে যদি হাইকোর্টের নির্দেশে লকডাউন করতে হত তাহলে জনমানসে সরকারে ব্যর্থতার বার্তা যেত। এই কারণেই লকডাউন করতে চাইছে না যোগী সরকার। এছাড়া যেভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মোদী লকডাউন না করার আবেদন জানিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি আগে থেকেই এটা জানত, তাই তারা লকডাউনের পথে হাঁটছে না।
সিদ্ধার্থ কলহংস আরও জানাচ্ছেন, যদি লকডাউন করা হয় তবে দেশের অর্থব্যবস্থায় তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। গতবারের লকডাউনের জেরে অর্থব্যবস্থা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা এখনও অনেক রাজ্য সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ীর। একইসঙ্গে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছানের যে স্বপ্ন মোদী দেখেছেন তাতেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া রয়েছে অন্যান্য সমস্যাও। লকডাউন হলে সরকারকে রেশন দিতে হবে, শ্রমিকদের স্থানীয় ভাবে কাজ দিতে হবে। আর এই সমস্ত কারণেই হয়ত নরেন্দ্র মোদী এবার লকডাউনের বিপক্ষে বলে মনে কর হচ্ছে। আর সেই পথেই হাঁটছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও।