স্ত্রী রিল তৈরি করতেন। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও শোনেননি। তার জেরে আত্মহত্যা করলেন স্বামী। আত্মহত্যা করার আগে রিলসে যাঁরা কমেন্ট করতেন তাঁদের উদ্দেশে বার্তাও দেন ওই ব্যক্তি। ঘটনা রাজস্থানের রায়নি থানা এলাকার নাঙ্গলবাস এলাকার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওই ব্যক্তির নাম সিদ্ধার্থ দৌসা। লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে চাকরি পান তিনি। তারপর মায়া নামের এক যুবতীকে বিয়ে করেন। তবে মায়া রিল বানাতে ভালোবাসতেন। তাতে আপত্তি ছিল সিদ্ধার্থর। তিনি স্ত্রী-কে একাধিকবার এই নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তবে মায়া শোনেননি। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। তা চরম মাত্রায় পৌঁছয় তখন যখন মায়াকে রিলসে কটু মন্তব্য করতে শুরু করেন নেটিজেনরা। এতে সম্মানহানি হয় সিদ্ধার্থর। তিনি ৫ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন। গত ৬ এপ্রিল পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন। পুলিশ এফআইআর করে।
সিদ্ধার্থ ও মায়ার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সিদ্ধার্থর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মায়াকে রিল বানাতে নিষেধ করেন সিদ্ধার্থ। কিন্তু মায়া রাজি হয়নি। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বিবাদ বাড়তে থাকলে মায়া সিদ্ধার্থর বাড়ি ছেড়ে বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। এমনকী সিদ্ধার্থর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন। অভিযোগপত্রে মায়া জানান, সিদ্ধার্থ মদ্যপানে আসক্ত। তাই তাঁকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
আত্মহত্যা করার আগে সিদ্ধার্থ সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে মায়ার সম্পর্কে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'আমি জানি সেও (মায়া) এই ভিডিও দেখছে। সন্তানরা আমার কাছে থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বলছি আমি মরে যাব। আমার ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়েছিল। তবে আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গেই আছি। আমার আইডি এবং আমার সিম সবই আমার শ্বশুরবাড়ির কাছে আছে। কিছু লোক আমাকে বলবে আমি ভুল। কিন্তু ভাইকে ছাড়ব না। আমার মৃত্যুর জন্য মায়া দায়ী। আমার পরিবারের কেউ কোনওকিছুর সঙ্গে জড়িত নয়। আমিও বহুবার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি। কথা বলেছি। এর বেশি কিছু করতে চাই না। এর আগে কখনও রিল করিনি। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে লাইভে এসেছি।'
লাইভে আরও বলেন, 'আমি আজ পর্যন্ত রিল করিনি। আমার কোনও ভুল থাকলে দয়া করে আমাকে জানান। মায়ার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও ঝগড়া বা বিবাদ নেই। ও আমার ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এটাই আমার একমাত্র লড়াই। আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে আছি। পরিবারের সদস্যরা সব জানেন। অনেকে নোংরা মন্তব্য করছেন। আপনারা অনেকে মজা নিচ্ছেন। তবে যদি কোনওদিন আপনাদের বাড়িতে এমন হয় তবেই বুঝবেন কতটা যন্ত্রণা। আমি আমার পরিবারকে পথে বসাতে পারব না। এর জন্য আমি আমার জীবনও বিসর্জন দেব। আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমার ভাই ও তার সন্তানদের সরকারি চাকরি পাওয়া উচিত।'
সিদ্ধার্থের এই ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে সিদ্ধার্থকেও তাঁর স্ত্রী মায়ার সঙ্গে রিলে অংশ নিতে দেখা গেছে।
পুলিশ সুপার (এসপি) আনন্দ শর্মা জানান,পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল রয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তাই মৃতের স্ত্রী ও সন্তানদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যে সব মানুষ অশ্লীল মন্তব্য করেছেন তাঁদেরও খোঁজ চলছে।