আস্ফালন দেখাতে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ফেসবুকের একটি প্রাইভেট গ্রুপে ছবি পোস্ট করে এক যুবক। ছবিতে দেখা যায় দুহাতে একটি বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছবিটি সরিয়েও নেওয়া হয়। যদিও তার আগেই সূত্র মারফত খবর পৌঁছে যায় কলকাতা পুলিশের কাছে। ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা ওই ছবির স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে তদন্তে নামে মানিকতলা থানার পুলিশ। যে প্রোফাইল থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল সেটি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে, কিষাণ জয়সওয়ারা নামে ওই যুবক মানিকতলা থানা এলাকার হরিশ নিয়োগী রোডের বাসিন্দা। এর আগেও স্থানীয় একটি মারামারির ঘটনায় তার নাম জড়ায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই ব্যক্তিকে শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে অরবিন্দ সেতুর কাছ থেকে আটক করে মানিকতলা থানার পুলিশ। তার কাছে থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ঘড়ি
পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুক থেকে পাওয়া ছবিটি দেখিয়ে কিষাণকে জেরা করা হলে, প্রথমে সেই পোস্টের কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত। কিছুক্ষণ পর বয়ান বদলে সে পুলিশকে জানায়, কিছুদিন আগে তার ফোন হ্যাক হয়েছিল। অন্য কেউ তার প্রোফাইল থেকে ছবি পোস্ট করেছে। এরপর লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বয়ান বদলাতে থাকে কিষাণ। যা দেখে সন্দেহ আরও বাড়ে তদন্তকারী অফিসারদের।
এরপর হঠাৎই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয় কিষাণের হাতে থাকা একটি ঘড়ি। পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে ওই ব্যক্তির মুখ না থাকলেও, হাতে থাকা ঘড়ি এবং জামাটি দেখা যাচ্ছিল। ঘটনাচক্রে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্তের হাতে থাকা ঘড়িটি হুবহু মিলে যায় ওই ছবির সঙ্গে। এরপরই আটক হওয়া যুবক এবং ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তারা যে একই লোক সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যান তদন্তকারীরা। যদিও তখনও ফোন হ্যাক হওয়ায় তত্ত্বেই অনড় থাকে সে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীনই পুলিশের আরও একটি দল তার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ছবিতে থাকা জামাটিও উদ্ধার করে। ফলে ওই ছবির জামা এবং ঘড়ি দুটোই মিলে যায়। এরপরেই পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে অভিযুক্ত এবং ছবি পোস্টের কথা স্বীকার করে সে। ধৃতের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে মানিকতলা থানার পুলিশ।
আরও দুষ্কৃতীর খোঁজ
কিষাণকে জেরা করে হদিশ পাওয়া যায় ওই গ্যাং-এ যুক্ত থাকা আরও কয়েকজন দুষ্কৃতীর। যার মধ্যে অন্যতম উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুমিত যাদব। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় জগদ্দল এলাকায় গুলি চালানর ঘটনায় নাম জড়ায় তার। খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত সুমিত যাদব তারপর থেকেই এলাকাছাড়া। শনিবার মধ্যরাতে জগদ্দল ও ভাটপাড়া এলাকাতেও তল্লাশি চালায় মানিকতলা থানার পুলিশ। যদিও সুমিত এলাকাছাড়া থাকায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। কিষাণকে জেরা করে এই গ্যাং-এ আরও কারা জড়িত সেই বিষয়েও জানা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।