ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক যখন আরও টানাপোড়েনের দিকে যাচ্ছে, তখন জলপ্রবাহ নিয়ে নতুন করে চাপ তৈরি করল ভারত। জম্মু-কাশ্মীরে টানা বর্ষণের কারণে চিনাব নদীর উপর থাকা সালাল এবং বাগলিহার বাঁধের একাধিক গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
এর ফলে পাকিস্তানের দিকে ব্যাপক হারে জল বইতে শুরু করেছে। পাকিস্তানে ইতিমধ্যেই বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আর এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কয়েকদিন আগেই ভারতের পক্ষ থেকে ওই বাঁধগুলোর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে পাকিস্তানে চন্দ্রভাগা নদীর জলস্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যায়। যেখানে আগে জল ২৫-৩০ ফুট থাকত, সেখানে তা নেমে আসে মাত্র ২-৩ ফুটে। এর ফলে পাকিস্তানের কৃষি এবং দৈনন্দিন জলের জোগান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণের কারণে বাঁধগুলির জলাধার উপচে উঠছে, তাই ভারত বাধ্য হয়েই গেট খুলে দেয়। ফলে হঠাৎ করেই পাকিস্তানে চন্দ্রভাগা নদীর স্রোত বেড়ে যায়।
পাকিস্তানের জন্য এটি বড় ধাক্কা। দেশটির অর্থনীতি এবং কৃষি এমনিতেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই নতুন জলছাড়া সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাকিস্তানের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে। অনেকে বলছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত কেবল প্রাকৃতিক কারণে নয়, এর মধ্যে কৌশলগত বার্তাও রয়েছে।
১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের অধিকার রয়েছে পূর্ব দিকের নদীগুলির (সতলজ, রাভি, বেয়াস) উপর এবং পাকিস্তানের অধিকার পশ্চিম দিকের নদীগুলিতে (সিন্ধু, ঝেলম, চিনাব)। কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পরে ভারত এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার পথে হাঁটছে বলে জোরালো ইঙ্গিত মিলছে।
কাশ্মীর হামলার জবাবে ভারত চালিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে লক্ষ্যভিত্তিক মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটিগুলি কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ভারতের পঞ্জাব, রাজস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরের সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা করেছিল। তবে ভারতীয় সেনা এবং অত্যাধুনিক S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেই হামলাগুলি ব্যর্থ করে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ শুধু জলাধার থেকে জল ছাড়ার জন্য নয়, এর মধ্যে কৌশলগত ও রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে। সিন্ধু জল চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারত বাঁধের জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু তা যখন কৌশলগতভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন দুই দেশের সম্পর্কের উপর বড় প্রভাব ফেলে। পাকিস্তানকে চাপে রাখতে ভারতের এই জলকৌশল কার্যকর বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন নয়। তবে এবারের জলপ্রবাহ কেন্দ্রিক উত্তেজনা পরিস্থিতিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।
জল এখন শুধুই প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে এক শক্তিশালী কূটনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশই এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ এর প্রভাব দূর ভবিষ্যতে আরও গভীর হতে পারে।