উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি। দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে(প্রতিবেদন লেখার সময়, সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে)। নিখোঁজ বহু। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরকাশীর ধরালি এলাকায় মেঘভাঙার ঘটনায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বহু বাড়িঘর। পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথর, কাদা ও জলের তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
স্থানীয় প্রশাসনের আশঙ্কা, এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জেলা প্রশাসনের তরফে দু'টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে: ০১৩৭৪২২২১২৬ এবং ৯৪৫৬৫৫৬৪৩১। উদ্ধারকাজ চলছে পুরোদমে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী আজতককে বলেন, 'মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ হঠাৎ বন্যা আসে। ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়। প্রায় ৬০-৭০ জনের কোনও খোঁজ নেই এখনও। তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও করা যায়নি।'
তিনি জানান, ১৯৭৮ সালের ৫ অগাস্ট, ঠিক এই দিনই কঞ্জোডিয়া এলাকায় ঠিক একই রকম বন্যা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, 'মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে হোটেল, লজ, বাজার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্রামের 'মুখিয়া' নিজের চোখে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য চোখে দেখেছেন। আমি আমার জীবনে কখনও এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখিনি।' ভয়, আতঙ্ক আর কান্না এলাকার বাতাসে।
আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, 'গত রাত থেকে ধরালিতে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় খীরগঙ্গা নদী। পুরো গ্রামটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। চারপাশে শুধু কাদামাটি আর ধ্বংসস্তূপ।' তিনি বলেন, এই ঘটনাটি যেন কেদারনাথ বিপর্যয়ের কথাই মনে করিয়ে দিল।
প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, 'খবর অনুযায়ী ১০০-রও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গিয়েছেন। প্রশাসন সবরকমভাবে উদ্ধারকার্যে নেমেছে। সেনাও দ্রুত পৌঁছচ্ছে। চলছে উদ্ধারকাজ।' নদীর জলস্ফীতির কারণে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
এই ভয়াবহ ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের খোঁজখবর নেন। রাজ্য সরকারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে এই বিপর্যয়ের ফলে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে জেলা সদর দফতরের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ধরালি এলাকায় নদীর জলস্তর ভয়ানক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। ফলে বাজার ও বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচলপ্রদেশের মতো পাহাড়ি রাজ্যে এই ধরনের মেঘভাঙা ও অতি বৃষ্টির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে আজও যে মানুষ কতটা অসহায়, তা যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিল উত্তরকাশীর ঘটনা।