আজও বিমান বাতিল
দেশের বিমান পরিবহণ খাতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা অব্যাহত। সমস্যায় হাজার হাজার মানুষ। গত পাঁচ দিনে বাতিল হয়েছে ইন্ডিগোর কমপক্ষে ২০০০-এর বেশি বিমান। শনিবারেও দিল্লি, মুম্বই-সহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে উড়ান বাতিল করা হয়েছে। একাধিক উড়ানও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে বিমানবন্দরগুলিতে টানা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। লাইনে দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেলেছেন বেশ কিছু মহিলা। আবার কোনও কোনও যাত্রীর চোখে মুখে বিরক্তি-ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
কান্নায় ভেঙে পড়লেন এক মহিলা যাত্রী
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গুজরাতের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিমানে বিশৃঙখ্লার দাবিতে এক মহিলা যাত্রী রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
যাত্রীরা বসার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছেন না
বিমান বাতিলে বিমানবন্দরের অবস্থা এতই বেহাল হয়ে গিয়েছে, যে যাত্রীরা বসার জায়গা পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছেন না। অত্যাধিক ভিড়ের কারণে অনেকেই অসুস্থও হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
ফ্লাইটের সময় নিয়ে জটিলতা
যাত্রীরা এখনও তাদের ফ্লাইটের সময় নিয়ে বিড়ম্বনায় ভুগছেন। এদিনও সকাল থেকে ইন্ডিগোর বেশ শতাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। এক যাত্রী দাবি করেন, "আমার ফ্লাইট অনলাইনে টাইমেই দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি যখন কাউন্টারে গেলাম, তখন আমাকে বলা হল উড়ান বাতিল করা হয়েছে। আর কোনও বিমান আজ নেই।"
হেনস্থার মুখে বিদেশিরাও
বিমান বিভ্রাটে পড়েছেন বিদেশিরাও। সকাল ৯টার ফ্লাইটে অন্ধ্রের কাকিনাড়ায় ভ্রমণকারী একজন বিদেশি যাত্রী বলেন, "আমি জানতে পারলাম এই বিমানটি বাতিল করা হয়েছে, আপাতত আমাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।"
দিল্লি থেকে কলকাতাগামী যাত্রীদের রুটে পরিবর্তন
ইন্ডিগো আগে থেকে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও দিল্লি থেকে কলকাতাগামী একটি বিমানকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাত্রীরা অসুবিধার মধ্যে পড়েন।
চেন্নাইতেও হাল বেহাল
চেন্নাইতে বিমান ধরতে আসা দুই যাত্রী জানান, তাদের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ইন্ডিগোর তরফে তাঁদেরকে আগে থেকে কোনও তথ্য জানানো হয়নি।
অসুস্থ হয়ে পড়লেন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ
এক স্নায়ু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, তাঁকে শুক্রবার জানানে হয়েছিল, শনিবার কোনও ফ্লাইট চলবে না। মাঝে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পর, তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার টাইমেই ওই ফ্লাইট ছেড়ে দেয়। ফলে তিনি সমস্যায় পড়েছেন। ইন্ডিগোর তরফে এখন কোনও সহায়তাও করা হচ্ছে না।
অন্য বিমান সংস্থাগুলিতেও টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে
IndiGo-র বিমান বাতিলের পর থেকে দ্রুত অন্য বিমান সংস্থাগুলিতেও টিকিটের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সেরই বুকিং সম্পূর্ণ। ফলে আর অপশন নেই যাত্রীদের কাছে।
লখনউ বিমানবন্দরে যাত্রীদের লম্বা লাইন
শনিবার সকাল থেকে লখনউয়ের চৌধুরী চরণ সিং বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিলের ফলে দীর্ঘ লাইন হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৯টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
বিমানবন্দরগুলিতে বিশৃঙ্খলা
অনেক বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীরা জানাচ্ছেন, বিমানের সময় বদল হলেও তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বিমান বন্দরে কেউ খাবার, জল না পাওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন।
সরকারের উপরও প্রশ্ন
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন এটা শুধুমাত্র IndiGo-র ব্যর্থতা নয়। ডিজিসিএ-রও চূড়ান্ত অবহেলা। কারণ, তারা যখন নিয়ম করেছিল, তখন দেখা উচিত ছিল বিমান সংস্থাগুলিতে পর্যাপ্ত বিমান কর্মী আছে কিনা।
ইন্ডিগোরও ব্যর্থতা রয়েছে
ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সও সরকারের নতুন নিয়ম অনুসারে কর্মী বাড়ায়নি। এমন পরিস্থিতিতে, ব্যবস্থার অভাবে, সারা দেশের বিমানবন্দরগুলিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
কবে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি?
কর্মী সংকটে ভুগছে ইন্ডিগো। যার ফলে বাতিল হয়েছে বহু বিমান। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার পক্ষ থেকে জানান হচ্ছে, তারা কাজ করছে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
ক্ষমা প্রার্থনা
ইন্ডিগোর CEO পিটার এলবার্স ভিডিও বিবৃতিতে যাত্রীদের কাছে বিশৃঙ্খলা ও অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি জানান, বিগত কয়েক দিনে ১,০০০-রও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ইন্ডিগো পরিষেবা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল?
এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন DGCA-র নয়া নিয়মকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট ও বিমানকর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের কাজের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল DGCA।
ওই নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছিল?
১) পাইলট ও বিমানকর্মীদের ৪৮ ঘণ্টার সাপ্তাহিক বিশ্রাম দিতেই হবে। আগে এই সময় ছিল ৩৬ ঘণ্টা।
২) প্রতি সপ্তাহে রাতে মাত্র ২টি বিমান অবতরণ করতে পারবেন পাইলটরা। আগে এই সংখ্যা ছিল ৬টি।
৩) পাইলট ও বিমানকর্মীদের নাইট ডিউটি সপ্তাহে পরপর দু'দিন একবারই দেওয়া যাবে।
৪) পাইলটরা 'লিভ' বা 'ছুটি' নিলে তা সাপ্তাহিক বিশ্রামের আওতায় আসবে না।
কেন IndiGo-ই সবচেয়ে বেশি সমস্যায়?
পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একাধিক এয়ারলাইন্সের থেকে এগিয়ে রয়েছে ইন্ডিগো। দেশের প্রায় ৯০টি এয়ারপোর্টে পরিষেবা রয়েছে এই সংস্থার। এছাড়াও, ইন্ডিগোর প্রচুর সংখ্যক বিমান রাতে চলাচল করে। নয়া বিধিনিষেধে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাতের বিমান চলাচলেই। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে IndiGo-কে। কারণ নিয়ম মেনে পরিষেবা দিতে যে পরিমাণে পাইলটের প্রয়োজন, তা এখনও ইন্ডিগোর কাছে নেই।
কেন্দ্রের নয়া নির্দেশ
যাত্রীদের অসহায়তার সুযোগে একাধিক বিমান সংস্থা অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ। যেই সব রুট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেই সব রুটে ভাড়ার ক্যাপ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এরফলে সুবিধা হবে যাত্রীদের।