একদিকে জম্মুর ডোডায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হড়পা বানে একেবারে ধুয়ে সাফ হয়ে গিয়েছে এলাকার পর এলাকা। অন্যদিকে বৈষ্ণোদেবীর যাত্রাপথে প্রবল ধসে মৃত্যুর মিছিল। সব মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের এই মুহূর্তে প্রকৃতির রোষে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন ধসে চাপা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩১। আরও বহু মানুষ চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা। উদ্ধারকাজ চলছে। তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে আশঙ্কা।
মঙ্গলবার বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরে যাওয়ার পথে কাটরার কাছে অর্ধকুমারীতে বিশাল ধস নামে। বিরাট এলাকাজুড়ে ওই ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। একাধিক ব্রিজ ভেঙে গিয়েছে, বিদ্যুত্ নেই, মোবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়া নেটওয়ার্ক নেই। সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে ইতিমধ্যেই উদ্ধার করে গিয়েছে। আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বৈষ্ণোদেবী যাত্রা। জম্মু ডিভিশনে ২২টির বেশি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। তার উপর ডোডায় হড়পা বানেও মাইলের পর মাইল নিশ্চিহ্ন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে জম্মুতে। এত বৃষ্টি এই প্রথমবার। সরকারি তথ্য বলছে, এটি এই মরশুমের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত। তবে রাতের পর থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে আসে, কিছুটা স্বস্তি মেলে। কিন্তু বিকেলের দিকে ত্রিকূট পাহাড়ের তীর্থযাত্রাপথে ধস নামে। প্রবল ধসে পথ ভেঙে যায়, গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকা। আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, তিনি এখনও প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। অতি ভারী বৃষ্টিতে গোটা জম্মু-কাশ্মীরের পরিষেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর কথায়, 'না কোনও ফিক্সড লাইন ওয়াইফাই চলছে, না ব্রাউজিং। অ্যাপ খুলতেও ভয়ানক দেরি হচ্ছে।' প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিশাল অংশে টেলিকম পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে জম্মু জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩,৫০০-রও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজে জেলা প্রশাসন, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ভারতীয় সেনা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা একসঙ্গে কাজ করছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের সঙ্গম এলাকায় ঝিলম নদীর জল বিপদসীমা (২২ ফুট) অতিক্রম করায় বন্যা সতর্কতা জারি।
প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জম্মু ও সাম্বার ২০ থেকে ৩০টি নীচু এলাকা জলে ডুবে গিয়েছে। বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সেতু, বিদ্যুতের খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার। প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে সাহায্যের জন্য ক্রমাগত ফোন আসছে।
জম্মু ও আশপাশের জেলায় প্রবল ঝড়, বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জম্মু শহর, আরএস পুরা, সাম্বা, আখনুর, নাগরোটা, কোট ভলওয়াল, বিষ্ণুহ, বিজয়পুর, পুরমণ্ডল, কাঠুয়া ও উদমপুর। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে রিয়াসি, রামবান, ডোডা, বিলাওয়ার, কাটরা, রামনগর, হীরানগর, গুল, বানিহালসহ সাম্বা ও কাঠুয়ার একাংশে।
পরিস্থিতির জন্য ২৭ পর্যন্ত জম্মু ডিভিশনের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবারের নির্ধারিত দশম ও একাদশ শ্রেণির সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে জম্মু-কাশ্মীর শিক্ষা বোর্ড।
অন্যদিকে, খারাপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে লেহ বিমানবন্দরেও। ফ্লাইটরাডার ২৪ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার একাধিক ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়। দিল্লি বিমানবন্দর থেকেও লেহগামী যাত্রীদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহবিদরা জানিয়েছেন, মেঘের উচ্চতা ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা প্রবল বজ্রঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঝড় পূর্ব-উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে, পাহাড়ি ও পার্বত্য এলাকায় আরও বৃষ্টি চলবে।
পরিস্থিতির জেরে উত্তর রেল বুধবার জম্মু ও কাটরা স্টেশনগামী ২২টি ট্রেন বাতিল করেছে। আরও ২৭টি ট্রেন মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে ফিরোজপুর, মান্ডা, চক রাখওয়ালান ও পাঠানকোট স্টেশনে। হিমাচল প্রদেশের পঠানকোট-কন্দররি রুটেও ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হয়েছে চক্কি নদীর তীরে ভূমিক্ষয় ও বন্যার কারণে। যদিও কাত্রা-শ্রীনগর রুটে ট্রেন চলাচল চালু রয়েছে।