করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে কার্যত দিশেহারা গোটা দেশ। সংক্রমণের গ্রাফ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয় বাড়ছে। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও প্রশ্নের মুখে। আর এই আবহেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়।
পুরুষ ও মহিলাদের শরীরে কোভিড সংক্রমণ নিয়ে এখন নানা সমীক্ষা-গবেষণা হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। প্রতিটি গবেষণাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে করোনা একটু বেশিই ভয়ানক হয়ে উঠছে। মহিলারা এই ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে সেরে উঠলেও পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে।
এবার মুম্বইয়ের বস্তি ও সাধারণ এলাকায় চালানো একটি সেরোলজিক্যাল সার্ভের ফলাফলও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এই সেরো সার্ভে করেছিল বৃহন্মুম্বই পুরসভা।
এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি৷
সমীক্ষা বলছে, দেহে কোভিড সংক্রমণ রোখার জন্য যেখানে ৩৫.২ শতাংশ পুরুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেখানে মহিলাদের দেহে তা হয়েছে ৩৭.১২ শতাংশ। এবং সেটাও বেশ তাড়াতাড়ি।
বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) সঙ্গে যৌছ ভাবে গত বছর মে থেকে অগস্টের মধ্যে দুই দফায় মুম্বই শহর ও তার লাগোয়া এলাকাগুলিতে ওই সেরোলজিক্যাল সার্ভে চালায় টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর), কস্তুরবা সরকারি হাসপাতাল এবং ফরিদাবাদের ট্রান্সলেশনাল হেল্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (টিএইচএসটিআই)।
দেখা যাচ্ছে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। বয়স্ক পুরুষদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি একই বয়সী মহিলাদের থেকে কম বলে উঠে আসছে গবেষণায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি গবেষণা করে দেখেছেন, করোনার ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে মহিলরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ACE2 প্রোটিন সেল SARS-COV-2-তে মহিলাদের কম ক্ষতিগ্রস্থ হন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে লিঙ্গভেদে শারীরিক গঠন এবং হরমোনের প্রতিক্রিয়া।
গবেষকদের মতে, নারীশরীরে টাইপ ১ ইন্টারফেরন প্রোটিনের উৎপাদন বেশি হয়। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ইমিউনিটি সিস্টেমের অস্বাভাবিক দুর্বলতা, যাকে সাইটোকিন স্ট্রম বলা হয়, তা প্রতিহত করে। ফলে করোনাভাইরাস মহিলাদের শরীরের ক্ষতি কম করতে পারে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের শরীরে টিকা প্রয়োগে খুব শীঘ্রই ফল মিলছে। অন্যদিকে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের টি-কোষের সক্রিয়তা কম। আর টি-কোষই শরীরের রোগ প্রতিরোধের মূল অস্ত্র। সেই কারণেই পুরুষদের ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থেকে যাচ্ছে।