কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি ঘিরে তুলকালাম। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের সাক্ষী লাদাখ। ঘটনার ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭০-এর বেশি মানুষ আহত। ১৫ দিন ধরে অনশনে বসেছিলেন সোনম ওয়াংচুক। অবশেষে তিনি অনশন প্রত্যাহার করলেন। এবার তাঁর ইসলামাবাদ সফর চর্চায়। শুরু হয়েছে নানা জল্পনা।
চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সোনম ওয়াংচুক পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। ইসলামাবাদে 'ব্রিথ পাকিস্তান' নামে ক্লাইমেট কনফারেন্সে যোগদান করেছিলেন তিনি। ডন সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সোনম ওয়াংচুক 'গ্লেশিয়ার মেল্ট: অ্যা সাস্টেনেবল স্ট্র্যাটেজি ফর দ্য ওয়াটার টাওয়ার্স অফ সাউথ এশিয়া' বিষয়ে প্যানেলে অংশ নিয়েছিলেন।
সোনম ওয়াংচুক পাকিস্তানের ওই কনফারেন্সে নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসাও করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছিলেন, 'হ্যাঁ আমি ইসলামাবাদে রয়েছি। খানে আমি মিশন লাইফকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসাও করছি। জল এবং বায়ুদূষণ নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য কোনও সীমানা হয় না। ফলে আমাদের প্রচেষ্টাও সীমানাহীন হওয়া উচিত। ভাল প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করা উচিত সকলেরই।'
তাঁর পাকিস্তান সফর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই সোনম ওয়াংচুক বলেছিলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও সীমানা থাকে না। এতে গোটা পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন রোখার প্রচেষ্টাতেও কোনও সীমানা থাকা উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছি কারণ ভাল প্রচেষ্টার পাশে সর্বদা থাকা উচিত। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনেতাই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদাসীন। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিশন লাইফ উদ্যোগ শুরু করেছেন। ফলে সেটির প্রশংসা তো করতেই হবে। এতে তো অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। যা ভাল উদ্যোগ, তা প্রশংসনীয়। সীমান্তের কথা না ভেবেই আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে পরিবেশের রক্ষায়।'
লে হিংসার ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সোনম ওয়াংচুক। তিনি জানিয়েছেন, 'লাদাখের জন্য অত্যন্ত দুঃখের ঘটনা এটা। ৫ বছর ধরে আমরা শান্তির পথে হেঁটেছি। অনশন করেছি, লে থেকে দিল্লি পর্যন্ত খালি পায়ে হেঁটেছি। আজ দেখছি শান্তিরক্ষার প্রচেষ্টা নষ্ট করা হল। হিংসা, গোলাগুলি এবং অগ্নিসংযোগের চিত্র দেখলাম। আমি লাদাখের নব প্রজন্মের কাছে অনুরোধ করছি, এই বোকামো বন্ধ করুন। আমি নিজের অনশন প্রত্যাহার করছি।' কেন্দ্র সরকারের অভিযোগ, লাদাখে হিংসা ছড়ানোর জন্য দায়ী খোদ সোনম ওয়াংচুক।
চারটি দাবি রেখেছেন সোনম ওয়াংচুক। ৫ অগাস্ট ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ হওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। জম্মু-কাশ্মীরকে এক আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি লে এবং কারগিল নিয়ে লাদাখ আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়। এই লাদাখকেই পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে।
ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে একটি দল ১০ সেপ্টেম্বর অনশনে বসে। তারা লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য হিসেবে দেখার দাবি তোলেন।
বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও মেসেজে সোনম ওয়াংচুক বলেন, 'এটা যুব সম্প্রদায়ের আক্রোশ। সে কারণেই তারা রাস্তায় নেমেছেন। গত ৫ বছর ধরে তারা রোজগারহীন। কোনও না কোনও কারণে অধিকাংশই চাকরি খুইয়েছেন। তবুও লাদাখের দাবি পূরণ হয়নি। এটা জেন-জি আন্দোলন।'
সোনম ওয়াংচুক বলেন, 'আমি যুব সম্প্রদায়ের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, হিংসার আশ্রয় নেবেন না। এই ধরনের হিংসা আমাদের ৫ বছরের পরিশ্রমে জল ঢালবে। এটা আমাদের পদ্ধতি নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি রাখছি। চেষ্টা করছি যাতে আমাদের দেশে শান্তি বজায় থাকে।'
জানা গিয়েছে, লাদাখের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রের আলোচনা হবে আগামী ৬ অক্টোবর। সেখানে লে অ্যাপেক্স বডি এবং কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সদস্যরা থাকবেন। ভারতীয় সংবিধানের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত অঞ্চলে বনভূমি এবং স্থানীয় নিয়মকানুন তৈরির অধিকার মিলবে। এর উদ্দেশ্য আদিবাসী অধিকার, নিয়মকানুন এবং সংস্কৃতি রক্ষা করা।
লাদাখের লেহতে বুধবার বিক্ষোভ চলেছে দিনভর। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীকে। সেই প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আপাতত লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে নতুন করে কোনও হিংসার ঘটনাও ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্ফু জারি করা হয়।