বিহারে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই বড় খবর আসছে। আজই পদত্যাগ করতে পারেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। অন্যদিকে বসে নেই আরজেডি শিবিরও। তেজস্বী যাদব জানিয়েছেন যে তিনি সহজে অভ্যুত্থান ঘটতে দেবেন না এবং এত সহজে রাজ্যাভিষেক ঘটতে দেবেন না। বলা হচ্ছে, আরজেডি মুখ্যমন্ত্রী পদে দলিত মুখকে এগিয়ে দিতে পারে। তেজস্বীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেডিইউ নেতা নীরজ কুমার। তিনি বলেছেন যে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি, যার অর্থ তাঁর (আরজেডি) মনে চোর রয়েছে।
এই সবের মধ্যেই রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) আজ দুপুর ১টায় তেজস্বী যাদবের ৫ সার্কুলার রোডের বাড়িতে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছে। এই বৈঠকে যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আরজেডি সহ-সভাপতি শিবানন্দ তিওয়ারিও নীতীশের এই আচরণে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, 'গতকাল আমি নীতীশ কুমারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলাম। কিন্তু এখনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইনি। আমরা নীতীশকেও ফোনও করেছি। বলল কী ব্যাপার, আমার সময় নেই। বললেন আজই জানাবেন। নীতীশ কুমার কীভাবে ইতিহাসে নাম লেখাবেন?'
অস্থির হয়ে উঠলেন লালু
নীতীশের পক্ষ বদলানোর খবরে বেশ অস্থির লাগছে আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবকে। বলা হচ্ছে যে লালু নীতীশকে প্রায় ৫ বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু নীতীশ লালুর ফোন ধরেননি। যার কারণে নীতীশ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে তিনি বিজেপির সঙ্গে যেতে চলেছেন।
কংগ্রেস কী বলছে?
এদিকে, শুধু নীতীশ একা নয়, কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন বিধায়কও তাঁর সঙ্গে যেতে চলেছেন বলে খবর। বিহার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অখিলেশ সিংও বড়সড় বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। এর আগেও বিধায়কদের ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। একজন এমএলসি দল ছেড়েছিলেন। কেউ কি এর পরে গিয়েছে?' পূর্ণিয়ায় রাহুল গান্ধীর জনসভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে নীতীশ কুমারকে এতে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, বিজেপি ও নীতীশ কুমারের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। বিজেপি আবার নীতীশকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। নানা ধরনের সূত্র ভেসে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। একটি সূত্র হল, সম্ভবত বিধানসভা ভেঙে দেওয়া উচিত, তবে এমন একটি সম্ভাবনাও রয়েছে যে বিজেপি নীতীশকে আবার মুখ্যমন্ত্রী করতে প্রস্তুত।
বিহার বিধানসভার সংখ্যার খেলা
বিহার বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার হল ১২২ জন বিধায়ক। লালু যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি ৭৯ জন বিধায়ক নিয়ে বৃহত্তম দল, যেখানে বিজেপি ৭৮ জন বিধায়ক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ৪৫ বিধায়ক নিয়ে তৃতীয় দল। কংগ্রেসের ১৯ বিধায়ক এবং বামেদের ১৬ বিধায়ক রয়েছে। যদি আমরা RJD, কংগ্রেস এবং বামদের বিধায়কের সংখ্যা যোগ করি, তাহলে মোট সদস্য সংখ্যা ১১৪ এ পৌঁছে যাচ্ছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার থেকে কম। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সম্পর্কে কথা বললে, জোটের নেতৃত্বাধীন দলটির ৭৮ জন বিধায়ক রয়েছেন। জিতন রাম মাঞ্জির নেতৃত্বাধীন হাম পার্টির ৪ জন বিধায়ক রয়েছেন। নীতীশ কুমারকে বিয়োগ করলে এনডিএ বিধায়কের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮২। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দলেরও এমন একজন বিধায়ক রয়েছেন, যিনি এনডিএ বা মহাজোটেও অন্তর্ভুক্ত নন। আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি, এনডিএ বা মহাজোট যাই হোক না কেন, নীতীশ কুমারের দল যে দিকেই যায় না কেন, সহজেই সরকার গঠন এবং রক্ষা করা যাবে।