ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে চেন্নাইয়ে ভারী বৃষ্টি চলছে, যার কারণে ইতিমধ্যে ১২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনেক ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও আজ স্কুলগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। চেন্নাইয়ে ভারী বৃষ্টিতে আটজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। এদিকে বাংলাতেও আজ থেকে প্রভাব পড়বে মিগজাউমের। একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিজছে শহর কলকাতাও।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম পশ্চিমবঙ্গেও ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে?
মিগজাউম ঝড়টি ৩ ডিসেম্বর রাত ১১.৩০-এর দিকে চেন্নাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, এর পর ৪ ডিসেম্বর রাত থেকে তামিলনাড়ুর ১১টি জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। এখন এই ঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশে প্রবেশ করবে আজ অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর। সেখানেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঝড়ের প্রভাব দেখা যাবে। এর পরে, ৭ ডিসেম্বর, মিগজাউম ঝড় মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলি সহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।
আজ থেকেই শুরু বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়াবিদরা। ফলে রাজ্যের জন্য কোনও সতর্কবার্তা নেই। তবে আজ, কাল ও পরশু দক্ষিণবঙ্গের দু’একটি জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে হালকা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানেও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। বুধবার থেকে দুর্বল হতে থাকবে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি। তখন আবার দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, কলকাতা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। পরদিন, বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বরেও বৃষ্টি হতে পারে উপকূলবর্তী ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে।
যা জানাচ্ছে হাওয়া অফিস
আবহবিদেরা জানিয়েছিলেন, সিস্টেমটি ঢুকেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব এ রাজ্যে পড়বে না। ফলে সেই অর্থে কোনও সতর্কবার্তা এ রাজ্যে নেই। সিস্টেম যত এগোবে তত পশ্চিমবঙ্গে মেঘ ঢোকা শুরু হবে। ইতিমধ্যেই যা শুরু হয়ে গিয়েছে। ৫, ৬ ও ৭ ডিসেম্বরে দক্ষিণবঙ্গের দু-এক জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আজ ৫ ডিসেম্বরে মূলত দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান-সহ বাকি জেলাতেও হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।
অন্ধ্র ও তামিলনাড়ুতে সতর্কতা
চেন্নাইয়ে ভারী বৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যে ১২ টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনেক ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া স্কুলগুলোতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। চেন্নাইয়ে ভারী বৃষ্টিতে ৮জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি ত্রাণ ব্যবস্থা নিয়ে কর্মকর্তাদের উচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের কারণে অন্ধ্রপ্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে, রাজ্য সরকার৮ টি জেলার জন্য সতর্কতা জারি করেছে। এই জেলাগুলি হল- তিরুপতি, নেলোর, প্রকাশম, বাপটলা, কৃষ্ণা, পশ্চিম গোদাবরী, কোনাসিমা এবং কাকিনাদা।
মুষলধারে বৃষ্টির কারণে চেন্নাই বিমানবন্দরের রানওয়ে ও পাতাল রেল প্লাবিত হয়েছে। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফ্লাইট। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতার মধ্যে এনডিআরএফ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডিও ঝড়ের বিষয়ে অবিরাম বৈঠক করছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাপতলা কালেক্টরেট স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা ও ত্রাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা সমন্বয় ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুমসহ মেডিকেল ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে। একই সময়ে, NDRF তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পুদুচেরির জন্য ৮ টি দল মোতায়েন করেছে। আরও ১০টি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে
ঝড়ের সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ঝড়ের কারণে সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমে তামিলনাড়ু, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে। এই সময়ের মধ্যে, ১০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে বাতাস বইতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় দেখা যাবে। এসব এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।