BJP Alert For Future: শনিবার সাতটি রাজ্যের তেরোটি বিধানসভা আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের ফলাফল ফের বিরোধীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। এই নির্বাচনে INDIA জোট ১০টি আসন জিতে গেলেও, বিজেপি মাত্র ২টি আসনে জয় পেয়েছে। একটি আসন গেছে নির্দল প্রার্থীর খাতায়। লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স করা কংগ্রেস, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এই নির্বাচনগুলি তাঁদের শক্তি যোগাচ্ছে।
যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে উপনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারণ যে ১৩টি আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল, তার মধ্যে বিজেপির কাছে ছিল মাত্র চারটি আসন। আর তিনটি ছিল নির্দল বিধায়কদের কাছে। তবে এই উপনির্বাচনের ফলের তেমন প্রভাব যদিও নাই পড়ে, তবে এটি অবশ্যই ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। দলীয় নেতারা সময়মতো হাল না ধরলে, আর ভুলগুলি শুধরে না নিতে পারলে, পথ আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
১- জনগণ কোনও পরিবর্তন অনুভব করেনি
কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠিত হলেও জনগণ কোনও পরিবর্তন দেখছে না। জনসাধারণের কথা তো ছেড়েই দিন, এমনকী সরকারের প্রতি কর্মীদের উৎসাহও কমে যাচ্ছে। বেকারত্ব সমস্য়ায় কিছুই করা হচ্ছে না এমন বিবৃতি স্থাপনে কংগ্রেস ক্রমাগত সফল প্রমাণিত হচ্ছে। এদিকে, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের আস্থা ভেঙে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না সরকার NEET পরীক্ষা নিয়ে কী চায়। এদিকে বিমানবন্দরের ছাউনি ভেঙে পড়া, সেতু ভেসে যাওয়া ইত্যাদি ক্রমাগত সংবাদের কারণে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে যে সরকার দুর্নীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। পরিবেশ যখন কারও অনুকূলে থাকে না, বিরোধীদের কথাই ছেড়ে দিন, তখন দলের মধ্যেও অসন্তোষের রব উঠতে শুরু করে।
উত্তরপ্রদেশের একজন বিজেপি বিধায়ক এবং একজন প্রাক্তন মন্ত্রী একই ধরনের কথা বলেছেন যা দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। জনসাধারণ অনুভব করতে শুরু করেছে যে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। এ প্রবণতা বাড়লে আগামী দিনে জনমনে পরিবর্তনের হাওয়া বইবে। এটা বন্ধ করা ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে কঠিন প্রমাণিত হবে।
২- মহারাষ্ট্র-হরিয়ানা ও ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ব্যাকফুটে
দলের জন্য আরেকটি সমস্যা হল এই বছর তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। মহারাষ্ট্র-হরিয়ানা এবং ঝাড়খণ্ডে দলের বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে যে এই তিন রাজ্যে বিজেপির পক্ষে দাঁত ফোটানো খুবই কঠিন। হরিয়ানায় ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জেজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছিল বিজেপিকে। এর জন্য জেজেপির দুষ্যন্ত চৌতালাকে রাজ্যের ডেপুটি সিএম করতে হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে দুষ্যন্তের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিজেপিও। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরেছে ৫টি আসন। হরিয়ানায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী আনার পরেও কিছুই বদলায়নি। জাতপাতের সমীকরণের কথা মাথায় রেখে নায়েব সিং সাইনিকে মুকুট দেওয়া হলেও রাজ্যের মানুষ মনে করেন না কোনও পরিবর্তন হয়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী আসার পর প্রথম দিন থেকেই উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন ও জনগণের সমস্যা নিয়ে নতুন সরকারের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি।
৩-আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনেও আশা নেই
এ বছর তিন রাজ্যে দল জিতুক বা হারুক, পরের বছর আবার লড়াইয়ে নামতে হবে, তার প্রস্তুতিও এখন থেকেই শুরু করা উচিত। কারণ আগামী বছর হতে যাওয়া নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি কোনও আশার আলো দেখছে না। আগামী বছর শুরু হবে দিল্লি থেকে। যেখানে জেল খাটছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মণীশ সিসোদিয়া।
কেজরিওয়াল এবং সিসোদিয়া যদি জেলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁরা বাড়তি সহানুভূতি পাবেন। বিজেপির পক্ষে এর মোকাবিলা করা সহজ হবে না। এরপর সেপ্টেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন দিয়ে বছর শেষ হবে। বিহারে এখনও নীতীশ কুমারের সমর্থনে দল চলছে। বিহারে বিজেপি এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো একজন শক্তিশালী নেতা তৈরি করতে পারেনি, স্পষ্টতই, দলটি একবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সহায়তায় মাঠে নামবে।
৪- যোগীকে নিয়ে জল্পনা কমছে না ইউপিতে
উত্তরপ্রদেশে জয় মানেই দেশের জয়। কিন্তু ইউপিতে দলটি এখনও কোন্দল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ যাই হোক না কেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে অপসারণের গুজব যে বিজেপির জন্য নেতিবাচক প্রমাণিত হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। এখনও উত্তরপ্রদেশ বিজেপির জন্য সবচেয়ে কঠিন বলে মনে হচ্ছে নির্বাচনে পরাজয়ের পর, দলটি এখন পর্যন্ত ্ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে পারেনি।
প্রতিদিনই রাজনৈতিক মহলে ভেসে ওঠে যোগীকে অপসারণ করা হলে উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিং পার্ট ২-এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
৫-কৃষকের পর সরকার সৈন্যদেরও বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে
নতুন সরকার কৃষক ও সৈন্যদের ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। যেখানে তার শেষ মেয়াদে সরকার সম্ভবত এই দুই শ্রেণির জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মোদী কৃষক ও সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থক হিসেবে তার ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। কিন্তু এখন কংগ্রেস এমন ন্যারেটিভ তৈরি করেছে যে সরকার পিছিয়ে পড়েছে।
উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পাঞ্জাবে কৃষকদের জন্য সম্মান নিধি প্রদানকারী সরকার ধাক্কা খেয়েছে।