এবারে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দেখা গেছে আদানি ইস্যুতে INDIA জোটের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি। এদিকে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার আপও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে রাজি নয়। আগামী বছর দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা ধরনের আলোচনা। এদিকে, আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোটের কথা ছিল, কিন্তু এখন আপের আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ধরনের আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, "আম আদমি পার্টি নিজের শক্তিতে দিল্লিতে নির্বাচনে লড়বে। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ধরনের জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।" প্রসঙ্গত, সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে, সংবাদ সংস্থা দাবি করেছিল, "কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে জোট নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে৷ ১৫ আসন কংগ্রেসের কাছে এবং ১-২ টি আসন ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য দলগুলির কাছে যাচ্ছে৷ আপ বাকি আসনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।"
আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক কেজরিওয়াল এক ঘন্টার মধ্যে এই খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে এবং জোটের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আপ ইতিমধ্যে দুটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের পর থেকেই ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়ে একাধিক সমস্যা প্রকাশ্যে আসছে। ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে নিয়ে কিছু সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও লোকসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী হয়েছিল এবং জোট বিজেপিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়েছিল, তবুও হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর জাদু দেখা যায়নি। এর ফলে, ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া দোটের নেত্রী করার বিষয়টিতেও বিভিন্ন সহযোগী দল তৃণমূলনেত্রীকে সমর্থন জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ও শিব সেনা (ইউবিটি) নেতা শরদ পওয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের ক্ষমতাকে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই এই জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার মধ্যে নেতৃত্বের যোগ্যতা আছে।” এই ই পরিস্থিতিতে, আরজেডি (রাষ্ট্রীয় জনতাদল) প্রধান লালু প্রসাদ যাদবও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি কংগ্রেসকে সরাসরি তিরস্কার করে তাদের আপত্তিগুলিকে অমূলক ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। শিব সেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউতও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “আমরা চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া জোটের মূল অংশীদার হিসেবে দেখতে। আমরা খুব শিগগিরই কলকাতায় তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি।” ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছে প্রশ্ন তোলেন, “কংগ্রেস কি ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়ে যে উদ্বেগ উত্থাপন হয়েছে তা সমাধান করবে?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আগে বলেছিলেন, “ইন্ডিয়া জোট গঠন আমি করেছিলাম, তবে এখন এর পরিচালনার দায়িত্ব তাদের ওপর যারা জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদি তারা ঠিকভাবে পরিচালনা না করতে পারেন, তবে আমি কী করতে পারি? আমি শুধু বলবো, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।” মমতার আরও বক্তব্য, “যদি আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়, তবে আমি নিশ্চিতভাবে এর সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করব। তবে আমি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যেতে চাই না, আমি এখানে থেকেই এটি পরিচালনা করতে পারি।”
মমতার বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই তাঁকে সমর্থন করে বিবৃতি এসেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির কাছ থেকে। লোকসভায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মোট সদস্য সংখ্যা যদি ২৩০ হয়, তাহলে অখিলেশ-উদ্ধব-শারদ-মমতার কাছে রয়েছে তার মধ্যে ৮৩ জন সাংসদ। অবশ্যই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস সবচেয়ে বড় দল, কিন্তু এই চারটি দলের মিলিত সাংসদদের সংখ্যাও কংগ্রেসের থেকে খুব পিছিয়ে নেই। স্বভাবতই জোটের নেতৃত্বের রাশ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের জন্য ধরে রাখা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। বিশেষত, মহারাষ্ট্রে যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল সেই উদ্ধবের শিবসেনা এবং শারদের এনসিপি অভিযোগ করছেন রাহুলের ‘ভুল’-এর জন্যই ডুবেছেন ।