দিল্লিতে আবগারি দুর্নীতি মামলায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। সোমবার কেজরিওয়ালকে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করানো হয়। ১৫ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। সোমবারই কেজরিওয়ালের ইডির হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়। গ্রেফতারির পর কেজরিওয়াল বলেছিলেন, 'প্রয়োজনে জেল থেকে সরকার চালাব।' আপাতত কেজরিওয়ালের ঠিকানা তিহাড় জেল।
সোমবার আদালতে হাজির করানোর সময় প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, 'উনি যা করছেন, তা দেশের জন্য ভাল নয়।' ইডির হেফাজত প্রসঙ্গে কেজরিওয়াল বলেছিলেন, 'যতদিন চায় ইডি আমায় হেফাজতে রাখতে পারে। কিন্তু এটা দুর্নীতি। ইডির দু'টো উদ্দেশ্য রয়েছে। একটা হল আম আদমি পার্টিকে শেষ করা এবং আর একটি হল তোলাবাজির চক্র চালিয়ে টাকা তোলা।'
বই চাইলেন কেজরিওয়াল
তিহাড় জেলে বসে বই পড়তে চান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে ৩টি বই দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। গীতা, রামায়ণ এবং সাংবাদিক নীরজা চৌধুরির 'হাউ প্রাইম মিনিস্টার ডিসাইডস', এই ৩টি বই জেলে নিয়ে যেতে চান আপ প্রধান। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধও চেয়েছেন। তিহাড় জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন ব্যারাকে কেজরিওয়ালকে রাখা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
জেলে কেজরিওয়ালের রুটিন কেমন হবে?
জেল সূত্রে খবর, সব বন্দির জন্য রুটিন একই। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের সেল এবং ব্যারাক খুলে দেওয়া হয়। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে চা এবং রুটি দেওয়া হয়। স্নানের পর যদি কোনও বন্দিকে আদালতে হাজিরা দিতে হয় এবং কারও সঙ্গে দেখা করতে হয়, তা হলে সেটার প্রস্তুতি করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার সময় সবজি, রুটি দেওয়া হয়। রুটির বদলে ভাতও পরিবেশন করা হয় বন্দিদের। দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত বন্দিদের ব্যারাকে থাকতে হয়। ৩টের পর ব্যারাক থেকে বার করা হয় বন্দিদের। সাড়ে ৩টেয় চা-বিস্কুট দেওয়া হয়। বিকেল ৪টের সময় আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সময়। বিকেল সাড়ে ৫টায় খাবার দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬-৭টায় বন্দিদের কক্ষে তালা দেওয়া হয়।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা'থেকে এই গ্রেফতারি বলে সরব হয়েছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। নিন্দায় সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক্স হ্যান্ডলে মমতা লিখেছিলেন, 'অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সুনীতার (কেজরিওয়ালের স্ত্রী) সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছি। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি।' এরপরই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন যে, বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের নিশানা করা হচ্ছে। অথচ, সিবিআই-ইডির তদন্তে যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা গণতন্ত্রের উপর নির্মম আঘাত।
কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে তার স্ত্রী সুনীতা বলেন, 'অরবিন্দ কেজরিওয়াল একজন সিংহ... তাঁকে বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না'। গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিজেপি বিরোধী জোটের নেতারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।