আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিল নিম্ন আদালত। তার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জামিনে স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে।
কেজরিওয়ালের জামিনের নির্দেশকে দিল্লি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরক্টরেট। ইডি আবেদনে জানিয়েছে, তদন্তের এমন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কেজরিওয়ালকে মুক্তি দেওয়া তা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর মতো প্রভাবশালী পদে রয়েছেন। হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির সেই যুক্তি খারিজ করে দাবি করেন, এই আবেদনের উপর দ্রুত শুনানির কোনও প্রয়োজন নেই। হাইকোর্টের বিচারপতি সুধীর জৈন জানান, যতদিন হাইকোর্টে শুনানি চলবে, ততদিন নিম্ন আদালতের নির্দেশ লাগু হবে না।
বৃহস্পতিবার আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে জামিন দেয় দিল্লির রউস অ্যাভিনিউ আদালত। ওই নির্দেশের পর ৪৮ ঘণ্টা স্থগিতাদেশ চেয়েছিল ইডি। তবে সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। এরপরই দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখানে বিচারপতি সুধীর কুমার জৈন এবং রবিন্দর দুদেজার অবকাশকালীন বেঞ্চে ইডি-র তরফের আইনজীবী দাবি করেন যে নিম্ন আদালত যুক্তি পেশ করার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান,'আমাদের লিখিত জবাব দাখিলের জন্য সময় দেওয়া হয়নি। এটা মোটেও ন্যায্য নয়। আর্থিক তছরূপ আইনের ৪৫ নম্বর ধারা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন,'আমাদের মামলা খুবই পোক্ত'।
কেজরিওয়ালের আইনজীবী বিক্রম চৌধুরী পাল্টা বলেন,'ইডি যা বলছে তা একদমই ঠিক নয়। ওরা নিজেদের পক্ষে সওয়াল করার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। ৭ ঘণ্টার সময় কি যথেষ্ট নয়? রায় মেনে নেওয়া উচিত।'
চলতি বছরের ২১ মার্চ আবগারি দুর্নীতি-কাণ্ডে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে ইডি। লোকসভা ভোটের যা নিয়ে বিস্তর নাটক হয়েছিল। মে মাসে অন্তর্বর্তী জামিন পান কেজরিওয়াল। ২ জুন আত্মসমর্পণ করার শর্তে তাঁকে ভোটের প্রচারের জন্য জামিন দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
আবগারি দুর্নীতি কী?
২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর আবগারি নীতি ২০২১-২২ কার্যকর করেছিল দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার। নতুন নীতির অধীনে সরকার মদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিল ব্যক্তিগত হাতে। তখন দিল্লি সরকার দাবি করেছিল যে নতুন আবগারি নীতি মাফিয়া শাসনের অবসান ঘটাবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব। এই নীতি নিয়ে শুরু থেকেই ছিল বিতর্ক। বিভিন্ন স্তরে বিরোধিতার জেরে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই এই নতুন নীতি খারিজ করে দিল্লি সরকার। ২০২২ সালের ৮ জুলাই দিল্লির তৎকালীন মুখ্য সচিব নরেশ কুমার যে রিপোর্টে দেন তাতে আবগারি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। ওই রিপোর্টে তিনি মণীশ সিসোদিয়া-সহ আম আদমি পার্টির একাধিক বড় নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন। দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনা সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন। ২০২২ সালের ১৭ অগাস্ মামলা হাতে নেয় সিবিআই। অর্থ তছরুপের অভিযোগও উঠেছিল। তাই অর্থ পাচারের তদন্ত করতে ইডিও একটি মামলা নথিভুক্ত করে। মুখ্যসচিবের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বেআইনিভাবে আবগারি নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন মণীশ সিসোদিয়া। তাঁর হাতেই ছিল আবগারি দফতর। অভিযোগ,নতুন নীতির জেরে লাইসেন্সধারী মদ ব্যবসায়ীদের অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কোভিডের অজুহাতে ১৪৪.৩৬ কোটি টাকার লাইসেন্স ফি মকুব করা হয়েছিল। বিমানবন্দর জোনের লাইসেন্সধারীদের ৩০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল। যা সরকারি রাজস্বের ক্ষতি।