লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় বিরোধী দল ইন্ডিয়া জোট। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর ইন্ডিয়া জোটের এটাই প্রথম বৈঠক। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রধান লালু প্রসাদ যাদব শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, সকলেই বৈঠকের জন্য দিল্লি পৌঁছেছেন। সামগ্রিকভাবে এটি ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক।
বিহারের রাজধানী পাটনায় বিরোধী নেতাদের প্রথম বৈঠক হয়। এই বৈঠকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে লড়তে সম্মত হয়েছে। নীতীশ কুমারের আয়োজনে পাটনা বৈঠকের পর বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বৈঠক হয়। কংগ্রেসের আয়োজনে এই বৈঠকে জোটের নাম ঘোষণা করা হয়। তৃতীয় বৈঠক মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হয় যাতে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এখন চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ অর্থাৎ ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে।
লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ভারত জোটের দিল্লি বৈঠকে কী হবে? এ বিষয়ে জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ডা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির ৩-২ ব্যবধানে জয়ের পর অনুষ্ঠিত হতে চলা এই বৈঠককে অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জোটের মুখ থেকে শুরু করে আসন ভাগাভাগির ফর্মুলা এবং কংগ্রেসের ভূমিকা, ভারত জোটের নেতাদের বৈঠকে অনেক প্রশ্নের সমাধানের চ্যালেঞ্জ থাকবে। ১০টি পয়েন্ট যা থেকে জোটের নেতাদের খুঁজে বের করতে হবে।
১. মুখ কে হচ্ছে?
ইন্ডিয়া জোটের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মুখ বেছে নেওয়া। নীতীশ কুমার থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল পর্যন্ত অনেক নেতার নাম এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সামনে এসেছে। কংগ্রেস নেতারাও রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ বলে দেখছেন। তবে জোটের বৈঠকের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নির্বাচনের পরেই ঠিক করা হবে। কিন্তু সভার আগে নিজের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে এই বিতর্কে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে জেডিইউ।
২. নীতিশ কুমারের ভূমিকা কী হবে?
বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের বিরোধী দলকে একত্রে আনতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাদের পাটনা থেকে দিল্লি এবং কলকাতা থেকে চেন্নাই পর্যন্ত একত্রিত করেছিলেন। এছাড়াও প্রথম সভা হোস্ট।
৩. নেতৃত্বের ফর্মূলা
ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিহারের মহাজোট সরকারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ প্রথম বৈঠকে এগিয়ে থাকলেও বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বৈঠকে কংগ্রেস চালকের আসনে ছিল।
৪. কংগ্রেসের ভূমিকা কী হবে?
কর্ণাটক নির্বাচনে জয় কংগ্রেসের জোটের নেতৃত্বের দাবিকে শক্তিশালী করেছিল, কিন্তু এখন কয়েক মাসের মধ্যেই চিত্র পাল্টে গেছে। তেলঙ্গানাকে বাদ দিলে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চারটিতে হেরেছে কংগ্রেস। এই তিনটি রাজ্যই হিন্দি বলয়ের অন্তর্গত এবং এই দুটি রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল।
৫. আসন ভাগাভাগির সূত্র
ইন্ডিয়া জোটের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আসন ভাগাভাগি নিয়ে। এসপি, জেডিইউ, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, তৃণমূলের মতো দলগুলি একটি রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে বিভিন্ন রাজ্যে প্রার্থী দিচ্ছে। ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে টিএমসি সক্রিয় থাকলেও, এই রাজ্যগুলিতে জেডিইউ-এরও বিধায়ক রয়েছে।
যেখানে এসপিও মধ্যপ্রদেশে তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, গুজরাত নিয়ে আম আদমি পার্টির উচ্চাকাঙ্ক্ষাও কারও কাছে গোপন নয়। দিল্লি ও পঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি আরও আসন চাইবে।
৬. কীভাবে এক আসনে একজন প্রার্থী?
বিরোধী ঐক্যের মহড়ার শুরু থেকেই নীতীশ কুমার বিজেপি ও এনডিএ-কে হারাতে এক আসনে এক প্রার্থীর ফর্মুলার কথা বলে আসছেন, কিন্তু প্রশ্ন হল এটা কীভাবে সম্ভব হবে? তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আপস হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে বাম দলগুলি।
৭. ভাগাভাগি করা প্রচারের কৌশল
ইন্ডিয়া জোটের নির্বাচনী প্রচারে অভিন্ন কৌশল কী হবে এবং কীভাবে তা সম্ভব হবে, সেটাও এই বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। কারণ মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৈঠকে যৌথ সমাবেশে ঐকমত্য হয়েছিল। সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনী রাজ্যের ভোপালে প্রথম জনসভা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি কমল নাথ সমাবেশ বাতিলের ঘোষণা দেন।
৮. সাধারণ নির্বাচনী কৌশল
একটি অভিন্ন নির্বাচনী কৌশলের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে তার বাস্তবায়ন পর্যন্ত, ভারত জোট অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কীভাবে একটি সাধারণ কৌশল নির্ধারণ করা হবে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
৯. বিবৃতি বন্ধ কীভাবে
ইন্ডিয়া জোটের সাংগঠনিক দলগুলি কীভাবে তাদের নেতাদের বক্তব্য বন্ধ করবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। সনাতন সম্পর্কে ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্তালিনের বক্তব্যের ভিত্তিতে বিজেপি ভারত জোটের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছিল।
১০. কীভাবে পারস্পরিক তিক্ততা থেকে মুক্তি?
পাটনার বৈঠকের পর একে অপরের বিরুদ্ধে বিবৃতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। এর পরে, অধীর রঞ্জন চৌধুরী যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলতে থাকেন, মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনের সময় অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে যেভাবে কড়া কথাবার্তা দেখা গিয়েছিল, তাতে ভারত জোটের দলগুলির মধ্যে তিক্ততা কেটে গেছে। এটা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।