নেপালে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প কি সিকিমে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল? এ দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। নেপালের ভূমিকম্পের কারণে চুংথাংয়ের উপরে দক্ষিণ লোনাক লেকের দেওয়াল দুর্বল হয়ে পড়েছিল কি না তা তাঁরা জানতে চান। লেক থেকে নির্গত জলের প্রবল প্রবাহের কারণে চুংথাং বাঁধ ভেঙে যায়। এটি ছিল একটি ১২০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (NRSC) থেকে পাওয়া ছবিগুলি ভয়ঙ্কর এই তথ্য সামনে এনেছে। যাতে দেখা যায়, দক্ষিণ লোনাক লেকের পুরো আয়তন কমেছে ১০০ হেক্টর। এটি দেখায় যে লেকের জলই তিস্তা নদীতে হড়পা বানের সৃষ্টি করেছিল।
২২ জন সেনা-সহ শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছে
দক্ষিণ লোনাক লেক আগে থেকেই ভাঙার পথে। বিজ্ঞানীরা ২ বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালেই এই লেক ভাঙার সম্ভাবনা জানিয়েছিলেন। এই লেকটি প্রায় ১৬৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। যার মধ্যে ধ্বংস হয়েছে ১০০ হেক্টর জমি। এর মানে এত বড় এলাকায় জমে থাকা বরফ ও জল নীচের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় জল কমিশন (CWC) এই তথ্য দিয়েছে।
ISRO-এর ছবি কী দেখায়?
বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা বলছেন যে নেপালের ভূমিকম্প এবং সিকিমের GLOG অর্থাৎ হিমবাহ লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডকে সরাসরি যুক্ত করা যায় না। তবে আমরা এর সম্পর্ক খতিয়ে দেখছি। কারণ শুধু মেঘ ফেটে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না। ইসরো প্রকাশিত ছবিগুলো দেখলেই জানতে পারবেন।
ISRO দ্বারা প্রকাশিত এই কম্বো ফটোটি দেখায় যে কীভাবে লোনাক লেক ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রথমে বড়, তারপরে ছোট হয়ে ভেঙে গিয়েছিল। ISRO তিনটি স্যাটেলাইট ছবির একটি কম্বো প্রকাশ করেছে৷ আপনি যদি ছবিটি বাম দিক থেকে দেখেন তবে পার্থক্যটি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। প্রথম অংশে দেখা যায় যে ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে হ্রদটির আয়তন ছিল প্রায় ১৬২.৭ হেক্টর। ২৮ সেপ্টেম্বর এটি ১৬৭.৪ হেক্টরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৪ অক্টোবর এর মাত্র ৬০.৩% এলাকা অবশিষ্ট ছিল। লেকের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এই ছবিগুলি ISRO-এর RISAT-1A এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA's) সেন্টিনেল-1A স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ লোনাক লেক উত্তর সিকিমের মাঙ্গান জেলার চুংথাং থেকে ১৭,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই লেকের গভীরতা প্রায় ২৬৯ ফুট। এটি ১.৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আধ কিলোমিটার চওড়া।
লেক ভাঙার পর কী হল?
৩-৪ অক্টোবর রাতে লেকের দেওয়াল ভেঙে যায়। ওপরে জমে থাকা জল দ্রুত নীচে প্রবাহিত তিস্তা নদীতে প্রবেশ করে। এর ফলে মঙ্গল, গ্যাংটক, পাকিয়ং ও নামচি জেলায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। চুংথাং এনএইচপিসি বাঁধ ও সেতু ভেসে গিয়েছে। মিনশিথাংয়ে দুটি, জেমায় একটি ও রিছুতে একটি সেতু ভেসে গেছে। সিকিমের স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসডিএমএ) জানিয়েছে যে জলের প্রবাহ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৫ মিটার। মানে প্রতি সেকেন্ডে ৫৪ কিলোমিটার।
১৭ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে যদি এই গতিতে জল নেমে আসে তবে তা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের জন্য যথেষ্ট। এই আকস্মিক বন্যায় অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অরুণ বি শ্রেষ্ঠ বলেন, তিস্তা নদীর আকস্মিক বন্যা ছিল ভয়াবহ। বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। যার জেরে এত বড় বিপর্যয় ঘটেছে। অরুণ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।