কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে (Karnataka Elections Result 2023) 'কিং' কংগ্রেস (Congress)। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে কর্ণাটকে সরকার গড়তে চলেছে। হিমাচল প্রদেশের পরে আরও একটি রাজ্য খোয়ালো বিজেপি (BJP)। কর্ণাটকে হারের জেরে দক্ষিণ ভারতে সাফ হয়ে গেল গেরুয়া শিবির। অর্থাত্ দক্ষিণ ভারতে একটি রাজ্যও বিজেপির দখলে রইল না। ২২৪ আসনের কর্ণাচক বিধানসভা নির্বাচনের গণনায় যা ট্রেন্ড, তাতে বিজেপি আদৌ ৮০ বেশির আসন পাবে কিনা, সন্দেহ।
এখন বিষয় হল, কর্ণাটকে বিজেপির এই হারের কারণ কী? দক্ষিণ ভারতের এই একটি মাত্র রাজ্যেই বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। এবারও কুর্সিতে ফিরতে চেষ্টার কসুর করেনি জেপি নাড্ডার নেতৃত্বাধীন বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে একের পর এক জনসভা করেছেন। ভোট রেজাল্টের কাটাছেঁড়ায় বিজেপি-র এই খারাপ রেজাল্টের ৬টি কারণ আপাতত উঠে আসছে।
আরও পড়ুন: 'হাত' ধরতে পারে কর্ণাটক, BJP-র বিদায়ের ইঙ্গিত
১. কর্ণাটকে জনপ্রিয় মুখের অভাব: কর্ণাটকে বিজেপির হারের সবচেয়ে বড় কারণ হল, জনপ্রিয় মুখের অভাব। বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বোম্মাইয়ের প্রভাব বিশেষ কিছু ছিল না। সেখানে কংগ্রেসের ডিকে শিবকুমার ও সিদ্দারাইমাইয়া বড় মুখ। বোম্মাইকে সামনে রেখে লড়াইয়েরই খেসারত দিতে হল বিজেপিকে।
২. দুর্নীতি: কর্ণাটকে বিজেপি-র হারের পিছনে আরও একটি বড় কারণ হল দুর্নীতি। ভোটের প্রচারে '৪০ শতাংশ পে-সিএম কোরাপশন' অ্যাজেন্ডা সেট করেছিল কংগ্রেস। সেটাই ধীরে ধীরে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াল। দুর্নীতির অভিযোগে ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফার পাশাপাশি এক বিজেপি বিধায়ককে জেলেও যেতে হয়েছে। স্টেট কন্ট্র্যাক্টর অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও অভিযোগ জানিয়েছিল। দুর্নীতির ইস্যুতে বিজেপি-কে হার দিয়ে চোকাতে হল।
৩. কুর্সির সমীকরণ বুঝতে ভুল: কর্ণাটকের রাজনৈতিক সমীকরণ বুঝতে ভুল করেছে বিজেপি। লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়, দলিত, আদিবাসী, ওবিসি ভোট ব্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। ঠিক এই জায়গাতেই বাজিমাত করে দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সঙ্গে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কও গিয়েছে।
৪. ধর্মীয় মেরুকরণ ধোপে টিকল না: গত এক বছর ধরে কর্ণাটকে হালাল, হিজাব থেকে শুরু করে আজান-- একাধিক ইস্যু খাড়া করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। এমনকী ভোটের মুখে বজরংবলির এন্ট্রিও বিজেপির সাথ দিল না। কংগ্রেস বজরং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিতেই, বিজেপি এই ইস্যু সোজা বজরংবলির সঙ্গে টেনে ভগবানের অপমান করার অভিযোগ তোলে। কিন্তু হিন্দুত্ব কার্ড কাজে দিল না।
৫. ইয়েদুরাপ্পা সহ একাধিক বড় নেতা কোণঠাসা: কর্ণাটকে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনতে বড় ভূমিকা নেওয়া বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে সাইডলাইন করে দেওয়া হয়। এছাড়াও জগদীশ সাত্তার ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মণ সাবদিরা কংগ্রেসে চলে যাওয়ায় লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপির হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।
৬. প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঢেউ: সবচেয়ে শেষে বলা যেতে পারে, কর্ণাটকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। বিজেপি সরকারের উপরে রাজ্যের একটি বড় অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার সুফল পেল কংগ্রেস।