বিরোধী জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স অর্থাৎ I.N.D.I.A.-এর বৈঠক মুম্বাইয়ে হওয়ার কথা। অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে এই বৈঠকে। মুম্বাই বৈঠকের আগে জোটের সমন্বয়ক নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন মন্ত্রী জামা খান প্রধানমন্ত্রী পদের দাবির বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
জামা খান বলেছেন, দেশের মানুষ নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। জামা খানের এই বক্তব্যের পর আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে বিরোধী জোট থেকে কে হবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ? নীতীশ কুমার নাকি রাহুল গান্ধী? জেডিইউ নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস নেতা পিএল পুনিয়া বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে আলোচনা নির্বাচনের পরে হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী চাই মমতাকে, প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। সম্প্রতি তৃণমূলের সাইবার সেলের সম্মেলনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ করার জোরদার সওয়াল উঠেছে। ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ সহ তৃণমূলের প্রথম সারির একাধিক নেতা মনে করছেন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা-ই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে পরাজিত করতে পারেন।
জেডিইউ-র চাপের কৌশল
নীতীশ কুমার নিজে অনেক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেছেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নন। একদিকে নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী পদের দাবি অস্বীকার করছেন, অন্যদিকে জেডিইউ নেতারা সময়ে সময়ে তাঁর নাম প্রচার করছেন। নীতীশ কুমার সম্প্রতি দিল্লি পৌঁছেছিলেন এবং এই সময় তিনি কোনও বিরোধী নেতার সঙ্গে দেখা করেননি। নীতীশের দিল্লি সফর এবং বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব, এবার প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর নিজের মন্ত্রীর বক্তব্য। এসব কি শুধুই কাকতালীয় নাকি জেডিইউ-এর চাপের কৌশল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
জামা খানের বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন মুম্বাইয়ে বিরোধী জোটের বৈঠক হতে চলেছে। বিরোধী জোটের সমন্বয়ক কে হবেন? মুম্বইয়ের বৈঠকে এ নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। এই বৈঠকের আগে জামা খানের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিরোধী জোটে প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিতাভ তিওয়ারি এই বক্তব্যকে আহ্বায়ক পদে চাপের কৌশল বলে অভিহিত করেছেন।
অমিতাভ তিওয়ারি বলেছিলেন যে জেডিইউ আশা করবে যে নির্বাচনের ফলাফলের পরে যদি অন্য কোনও দলের সমর্থন প্রয়োজন হয় তবে নীতীশের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেওয়া যেতে পারে। এটাও একটা ফ্যাক্টর যে জোটে অন্যান্য দল কংগ্রেসের থেকে বেশি আসন পেলেও অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ উঠতে পারে।
নীতীশের নামে কি রাজি হবে কংগ্রেস?
রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। কংগ্রেস স্পষ্ট বলেছে আমাদের মুখ রাহুল গান্ধী। এমন পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমারের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিতে রাজি হবে কি কংগ্রেস? বেঙ্গালুরু বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন যে আমাদের লক্ষ্য ক্ষমতা পাওয়া নয়, আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও লোভী নই। একইসঙ্গে কংগ্রেস নেতারা স্পষ্ট করে বলছেন রাহুল গান্ধী আমাদের মুখ হবেন। এমন পরিস্থিতিতে রাহুলের বদলে অন্য কোনও মুখ কি মেনে নেবে কংগ্রেস? এর সম্ভাবনা কোনটির সমান নয়। অমিতাভ তিওয়ারি বলেছেন যে নতুন জোট গঠনের পর থেকে ইউপিএ সরকারের সময় কথিত দুর্নীতি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছে বিজেপি। দুর্নীতির পাশাপাশি গান্ধী পরিবার, পরিবারতন্ত্র বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিজেপির কৌশল মোকাবেলায় নীতীশের নামে সম্মতি দিতে পারে কংগ্রেসও।