ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক চির উজ্জ্বল নাম প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukherjee)। আর শুধু রাজনীতি নয় দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদেও বসেছিলেন এই বঙ্গ সন্তান। হয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি (President Of India)। তবে তার আগে অবশ্য একটা দীর্ঘ সংসদীয় রাজনৈতিক জীবন রয়েছে প্রণববাবুর। প্রায় ৫ দশক সংসদের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি। পরে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভার সদস্যও হন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
'শ্রেষ্ঠ সাংসদ' প্রণব মুখোপাধ্যায়
সংসদীয় রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi), পি ভি নরসিমা রাও (P V Narasimha Rao), মনমোহন সিং (Manmohan Singh)-এর মতো প্রধানমন্ত্রীদের মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিচক্ষণতার সঙ্গে সামলেছেন অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব। তাছাড়া লোকসভা ও রাজ্যসভায় দীর্ঘদিন দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন প্রণব। সংসদে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য 'শ্রেষ্ঠ সাংসদ' পুরস্কারেও ভূষিত করা হয় প্রণববাবুকে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিশেষ সাফল্য
তবে এত দায়িত্বের মধ্যেও দেশের অর্থমন্ত্রী (Finance Minister Of India) হিসেব বরাবরই বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন এই বঙ্গ সন্তান। আর তার জন্য শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশংসিত হয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১৯৮৪ সালে ইউরোমানি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় একবার তাঁকে বিশ্বের ৫ অর্থমন্ত্রীর অন্যতম বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের দৈনিক সংবাদপত্র এমার্জিং মার্কেটসের তরফে 'ফাইন্যান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার ফর এশিয়া' পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। ওই বছরই দ্য ব্যাঙ্কার পত্রিকা তাঁকে 'ফাইন্যান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার' পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি এমন কিছু আর্থিক সংস্কারের দিশা দিয়েছিলেন যা সেই সময় কর্পোরেট জগৎ ও অর্থনীতিবিদদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
২০১২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড় করায় ইউপিএ (UPA)। এনডিএ (NDA) প্রার্থী পি এ সাংমাকে খুব সহজেই পরাজিত করে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসেন তিনি। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদ শেষ হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। এরপর গতবছর দিল্লিতে নিজের বাসভবনে শৌচাগারে পড়ে গিয়ে আহত হন প্রণববাবু। ভর্তি করা হয় দিল্লির সেনা হাসপাতালে। করোনা পরীক্ষা করা হলে, সেই রিপোর্টও পজিটিভ আসে। এরপর চলে চিকিৎসকদের লাগাতার প্রচেষ্টা। কিন্তু সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে গতবছরের ৩১ অগাস্ট বর্ণময় এই ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান হয়।
আরও পড়ুন - মৃত BJP কর্মী অভিজিৎ সরকারের ফোন বাজেয়াপ্ত করল CBI