লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ভাষণ ঘিরে তুলকালাম। পরিস্থিতি এতটাই তপ্ত হল যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পর্যন্ত উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সরব হলেন। তারপরেই সংসদে NDA-এর সব সাংসদরা চিত্কার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সতর্ক করলেন রাহুলকে। বললেন, 'আমি সিরিয়াসলি এই বিষয়টি দেখব।' এদিন রাহুল ভাষণের সময় ভগবান শিব, গুরু নানক, মহম্মদের ছবি দেখান। অভিযোগ করেন, সব ধর্ম অহিংসার কথা বলেছে। হিন্দুত্ব মানে হিংসা ছড়ানো, ভয় দেখানো নয়। বিজেপি দেশজুড়ে হিংসা, ভয় ছড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি নিানা করে বলেন, 'বিরোধীরা ছাড়ুন, ইনি তো বিজেপি-র লোকদেরও ভয় দেখান।'
আজ অর্থাত্ সোমবার লোকসভায় ভাষণে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন রাহুল গান্ধী। বিরোধী দলনেতার প্রথম ভাষণেই তুলকালাম হল লোকসভা। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে রাহুল ভগবান শিব, গুরু নানক ছবি দেখিয়ে বিজেপি-কে আক্রমণ শুরু করে রাহুল গান্ধী। ভাষণের এক জায়গায় তিনি বলেন, 'নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দেন, হিংসা হিংসা করতে থাকেন। আপনি হিন্দুই নন।'
যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী উঠে দাঁড়ালেন
রাহুল একথা বলতেই উঠে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাহুলের কথার প্রতিবাদ করে বলেন, 'বিরোধী দলনেতা যেভাবে গোটা হিন্দু সম্প্রায়কে হিংস্র বললেন, এটা খুবই গুরুতর অভিযোগ।' মোদীকে পাল্টা রাহুল বলেন, 'বিজেপি-আরএসএস গোটা হিন্দু সম্প্রদায় নয়।'
রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি বলেন, 'আমি জৈবিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জৈবিক নন।' রাহুল গান্ধী যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, স্পিকার তাকে কিছু বিষয়ে বাধা দেন। এ নিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেস দল শিবজির ছবি দেখিয়েছিল এবং আপনি রেগে গেলেন।
'শিবজি বলেছেন, ভয় পেও না, ভয় দেখিও না'
রাহুল গান্ধী তার ভাষণে বলেন, 'ভারত কখনও কাউকে আক্রমণ করেনি। তার কারণ ভারত অহিংসার দেশ, ভয় পায় না। আমাদের মহাপুরুষরা এই বার্তা দিয়েছিলেন- ভয় পেয়ো না, ভয় দেখিও না। শিবজি বলেন, ভয় পেও না, ভয় দেখিও না এবং মাটিতে ত্রিশূল পুঁতে দাও। অন্যদিকে যারা নিজেদেরকে হিন্দু বলে পরিচয় দেয় তারা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা হানাহানি-হানাহানি ও ঘৃণা-ঘৃণা-বিদ্বেষ নিয়ে বেঁচে থাকে। আপনি মোটেও হিন্দু নন। হিন্দু ধর্মে স্পষ্টভাবে লেখা আছে যে সত্যকে সমর্থন করা উচিত।
'বিজেপির জন্য শুধু ক্ষমতাই গুরুত্বপূর্ণ'
ভগবান শিবকে তাঁর অনুপ্রেরণা হিসাবে বর্ণনা করে রাহুল গান্ধী বলেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। বাম হাতে ত্রিশূল মানে অহিংসা। আমরা কোনও হিংসা ছাড়াই সত্যকে রক্ষা করেছি।
'ইডি জেরা, বিস্মিত অফিসাররাও'
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাহুল বলেন, 'ইডি আমাকে জেরা করেছে, এমনকী অফিসাররাও অবাক। ইন্ডিয়া ব্লকের নেতাদের জেলে বন্দী করে রাখা হয়। যারা ওবিসি-এসসি-এসটি নিয়ে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
'প্রভু রামের জন্মস্থান বিজেপিকে বার্তা দিয়েছে'
রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, রামের জন্মস্থান অযোধ্যা বিজেপিকে একটি বার্তা দিয়েছে। অবধেশ প্রসাদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই বার্তাগুলি আপনার সামনে বসে আছে। গতকাল কফি খাওয়ার সময় তাঁকে জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে। আপনি কখন জানলেন, আপনি অযোধ্যায় জয়ী হয়েছেন? তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই জেনেছি। অযোধ্যায় বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে, জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। সমস্ত ছোট দোকানদার ও ছোট ছোট দালান ভেঙ্গে ঐ লোকদের রাস্তায় চলাফেরা করা হয়।
অযোধ্যা থেকে নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী
রাহুল গান্ধী বলেন, 'অযোধ্যা মন্দির উদ্বোধনে অযোধ্যার মানুষ খুব দুঃখ পেয়েছে। আম্বানি জি ছিলেন, আদানি জি ছিলেন, কিন্তু অযোধ্যার কেউ ছিলেন না। নরেন্দ্র মোদীজি অযোধ্যার মানুষের মনে ভয় তৈরি করেছিলেন। তাদের জমি কেড়ে নিয়েছে, তাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়েছে, কিন্তু উদ্বোধনের কথা বাদ দিয়ে, তাদের বাইরে যেতেও দেওয়া হয়নি। তিনি আমাকে আরেকটি কথা বলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী দুবার পরীক্ষা করেছিলেন যে আমি অযোধ্যায় লড়াই করব কিনা। জরিপকারীরা বলেছিলেন যে অযোধ্যায় যাবেন না, সেখানকার মানুষ আপনাকে পরাজিত করবে, এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী বারাণসী গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।