গত দু'দিন শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও ভেস্তে যায়। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয় আরজি কর মামলার। এদিন ছিল মামলার সপ্তম শুনানি। আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও দেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা গ্রহণ করেছিলেন। এদিন শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ের থেকে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট দেখতে চান। তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের স্টেটাস রিপোর্ট পড়েন তিন বিচারপতি। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে সিবিআই। চার সপ্তাহ পরে পরবর্তী রিপোর্ট দিতে হবে সিবিআইকে।
এদিন শুনানির শুরুতেই আদালতে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI। সিবিআই-কে তদন্ত চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আগামী চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে সপ্তম স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে। আরজি কর মামলার শুনানি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নিয়ে যেতে চেয়ে আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। এদিন সেই আবেদনে সাড়া জেয়নি শীর্ষ আদালত। ফলে রাজ্যেই হবে আরজি কর মামলার শুনানি।
রাজ্য সরকারের তরফে বৃহস্পতিবার একটি রিপোর্ট পেশ করা হয় সর্বোচ্চ আদালতে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১১ নভেম্বর থেকে নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতিমধ্যেই চার্জ গঠন করেছে সিবিআই। রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, রাজ্য সরকার চায় দ্রুত তদন্ত শেষ হোক। দ্রুত দোষীদের শাস্তি হোক। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি চাই না মণিপুরের মতো ঘটনা ঘটুক। বিচার শেষ হতে দিন সকলে। তিনি আরও বলেন, মণিপুরের ক্ষেত্রে আমরা যা করেছিলাম, এখানে সে রকম কিছু করছি না। মামলা স্থানান্তরের এখনই কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করে আদালত।
ডাক্তারদের তরফে আইনজীবী ফিরোজ এদুলজি বলেন, সিবিআই কিছু করছে না। শুধু রাজ্য পুলিশের ফলাফল কপি-পেস্ট করেছে। আইনজীবী আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, লোকের কথা বলবেন না। আপনি এখন কার হয়ে কথা বলছেন? এমন সাধারণের বক্তব্য বলবেন না। সেরকম কিছু এখন আপাতত নেই। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় একই সঙ্গে বলেন, চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। যদি জেলা জজ মনে করেন, তিনি সবসময় আরও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। এই নিয়ে প্রধান বিচারপতি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নের জবাব হলফনামার আকারে জমা দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তিন দিন আগেই হলফনামা জমা দিয়েছিল রাজ্য। বৃহস্পতিবার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপিত হলেও শুনানি হয়নি। এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে আমাদের কাছে রিপোর্ট জমা পড়েছে। আজ এই বেঞ্চ অন্য মামলায় ব্যস্ত। তাই পরবর্তী শুনানির দিন এই নিয়ে শুনানি হবে।’’ এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১১ নভেম্বর হবে বলে জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। এদিকে আগামী ১০ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। অর্থাৎ তিনি আর এই মামলার শুনানি করবেন না। পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে শুনানি হবে।