আদানি ইস্যুতে সংসদের দুই কক্ষে কংগ্রেসের থেকে যে ভিন্ন পথে হাঁটবে জোড়াফুল, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গত ক’দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবারও সেই একই দৃশ্য ছিল সংসদে। এই নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদের বক্তব্য, 'সংসদে আমারা এক, আমরা নিজেদের কথা তুলে ধরেত চাইছি, আমরা রাজ্যের নাম বদল চাইছি, তা এখনও হয়নি , আমারা দেশ ও রাজ্যের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। ' বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদের এই বক্তব্যে তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আদানি কি তাহলে দেশের ইস্যু নয়?
প্রসঙ্গত, এদিন সংসদের মূল প্রবেশপথ মকর দ্বারের সামনে আদানি ঘুষ-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত চেয়ে এবং ‘মোদী ও আদানি একই সত্তা’ বলে স্লোগান দিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রতিবাদ জানাল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। কিন্তু সেখানে আপ, আরজেডি, উদ্ধবপন্থী শিবসেনা, ডিএমকে হাজির থাকলেও যথারীতি অনুপস্থিত থাকলেন তৃণমূল সাংসদরা। উল্লেখ্য , শুধুমাত্র একটি ইস্যুকে হাতিয়ার করে দল যে সংসদ অচল করে রাখার পক্ষে নয় সে কথা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল তৃণমূল। এই বিষয়ে বাংলার শাসকদলের বক্তব্য, শুধু আদানি আদানি করে সংসদ অচল করে রাখলে বিজেপিরই সুবিধা। সংসদ অচল হলে মানুষের সমস্যা তুলে ধরার জায়গা পাওয়া যায় না। তাছাড়া শুধু একটা দুর্নীতির ইস্যু তুলে জনমানসে প্রভাব ফেলা যাবে না। তাই সংসদ অধিবেশনে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, বাংলার বঞ্চনা, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার পাওনা টাকা আটকে রাখা, সার-সংকট, মণিপুরে হিংসা-সহ উত্তর-পূর্বের সমস্যার কথা তুলে ধরতে চায় তৃণমূল।
তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, আদানি ছাড়াও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্গে যুক্ত আরও অনেক ইস্যু রয়েছে। সেই সব ইস্যু ও বাংলাকে বঞ্চনা নিয়ে সংসদে চেপে ধরতে হবে মোদী সরকারকে। এই টানাপড়েনের মধ্যে বৃহস্পতিবারও সংসদ কক্ষের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। তবে সেই বিক্ষোভে হাজির ছিল না ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক তৃণমূল ও সমাজবাদী পার্টি৷ সূত্রের খবর, বিরোধী জোটের দুই বড় শরিকের অনুপস্থিতি কংগ্রেস শিবিরকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে৷ পরিস্থিতির গভীরতা অনুধাবন করে ইতিমধ্যে লোকসভা কক্ষে তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বয়ং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী৷ সূত্রের দাবি, সরকার বিরোধী সব আন্দোলনে তৃণমূলকে পাশে চায় কংগ্রেস, সুদীপকে জানান রাহুল নিজেই৷ সুদীপও তাঁকে পাল্টা জানান, তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ মেনে বাংলার আমজনতার ইস্যু নিয়েই সোচ্চার হবে জোড়াফুল। বাকি ইস্যুর কথা পরে ভাবা যাবে৷ রাহুল বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদের কথার সঙ্গে একমত হন এবং এই বিষয়ে পরে আবার আলোচনা করবেন বলে জানান৷
সংসদীয় সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, তৃণমূল কেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছে না৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, শুধুমাত্র আদানি ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরার চেষ্টা করে কোনও লাভ হচ্ছে না দেখেই এ বার মরিয়া হয়ে তৃণমূলকে পাশে পেতে চাইছেন রাহুল৷ শীতকালীন অধিবেশনের গোড়া থেকেই আদানি নিয়ে সংসদ অচলের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা বৈঠকেও গরহাজির থেকেছেন তৃণমূল সাংসদরা। ইন্ডিয়া-র মধ্যে ‘বিভাজনের’ এই সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সংসদে বিজেপির কুকীর্তিকে প্রকাশ্যে আনার সার্বিক কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা সবাই একজোট। তবে বিভিন্ন দলের সেই কৌশলকে বাস্তবায়িত করার বিভিন্ন উপায় থাকতেই পারে।” জানা যাচ্ছে, ধর্নায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে আজ সকালে কংগ্রেসের গৌরব গগৈ তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনকরলে সুদীপ বলেন, তৃণমূলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয়বঞ্চনা-সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মোট ছ’টি বিষয় নিয়েই তাঁরা সরব হবেন। এমতাবস্থায় তৃণমূলের পক্ষে এই ধর্নায় যোগ দেওয়াসম্ভব নয়।