উত্তরকাশীতে টানেলে আটকে শ্রমিকরা। মঙ্গলবার উদ্ধার অভিযানের ১৭ তম দিন। মার্কিন অগার মেশিন আটকে যাওয়ার পরে, উদ্ধারকারী দলগুলি এবার নয়া পন্থা নিয়েছে। 'র্যাট-হোল মাইনিং' (Rat-hole Mining) পন্থায় খননের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। র্যাট-হোল খননের টিম ইতিমধ্যেই বেশ খানিকটা ম্যানুয়াল ড্রিলিং করে ফেলেছে। অন্যদিকে, টানেলের উপরে উল্লম্ব ড্রিলিংও করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪২ মিটার খনন করা হয়েছে। এতে ১ মিটার চওড়া পাইপ ঢোকানো হচ্ছে। এর সাহায্যে টানেলের ভিতর থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হবে।
মেশিন ব্যর্থ, এখন মানুষের সাহায্যেই উদ্ধার অভিযান
শ্রমিকরা টানেলে প্রায় ৬০ মিটার দূরত্বে আটকে। অগার মেশিনের মাধ্যমে ৪৮ মিটার পর্যন্ত ড্রিল করা হয়েছিল। এরপর মেশিনটি টানেলেই আটকে যায়। পরে সেটি কেটে বের করা হয়। এর পর ম্যানুয়ালি, হাতে খনন শুরু করা হয়। সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, দু'টি প্রাইভেট সংস্থাকে দু'টি দল ম্যানুয়াল হরিজন্টাল ড্রিলিংয়ের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। একটি টিমে ৫ জন বিশেষজ্ঞ, অন্যটিতে ৭ জন। এই ১২ জন সদস্যকে কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়েছে। এই টিমগুলো অবশিষ্ট মাটি, পাথর বের করে আনবে। এর পরে ৪০০ মিমি ব্যাসের একটি পাইপ ঢোকানো হবে। এর সাহায্যে এনডিআরএফ দল কর্মীদের বের করে আনবে।
'র্যাট-হোল' মাইনিং কী?
সিল্কিয়ারা টানেলের বাকি অনুভূমিক খননের কাজ ম্যানুয়ালি করা হচ্ছে। টানেল তৈরিতে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিযুক্ত করা হয়েছে। এঁরা র্যাট-হোল মাইনার হিসাবে পরিচিত। র্যাট-হোল, অর্থাৎ ইঁদুরের গর্তের মতো সরু করে গর্ত কাটেন এই শ্রমিকরা। সরু টানেলের মাধ্যমে মাটির নিচে শ'য়ে শ'য়ে ফুট চলে যান তাঁরা। মূলত কয়লা উত্তোলনের জন্যই এই পন্থা ব্যবহার করা হয়। মেঘালয়ের মতো দুর্গম এলাকা, যেখানে বড় এলাকাজুড়ে খনন করা কঠিন, সেখানেই এমনভাবে, কম শ্রমিক নিয়ে খনন করা হয়।
বলাই বাহুল্য, হাতে করে এমন সরু গর্ত খনন করা বেশ বিপদজনক। যে কোনও সময়ে ধস নামতে পারে।
এই ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই ২০১৪ সালে, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এটি নিষিদ্ধ করে। এনজিটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও, অবৈধভাবে র্যাট-হোল খনন অব্যাহত রয়েছে। মেঘালয়ে প্রতি বছর র্যাট-হোল খনির মাধ্যমে কয়লা তুলতে গিয়ে বহু শ্রমিক প্রাণ হারান।
উত্তরাখণ্ড সরকারের নোডাল অফিসার নীরজ খাইরওয়াল বলেন, যে উদ্ধারকারীরা এই র্যাট-হোল খনন কৌশলের বিশেষজ্ঞ।
১২ নভেম্বর থেকে শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন
উত্তরকাশী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, সিল্কিয়ারা টানেল কেন্দ্রীয় সরকারের চারধাম 'অল ওয়েদার রোড' প্রকল্পের অংশ। ব্রহ্মখাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কে নির্মিত এই টানেলটি ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১২ নভেম্বর, টানেলের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে শ্রমিকরা টানেলের ভেতরে আটকে পড়েন। তাঁদের মুক্ত করতে ১৬ দিন ধরে উদ্ধার অভিযান চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য অর্জিত হয়নি।