উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সিল্কিয়ারা টানেলে ধস। গত ১৭ দিন ধরে ৪১ জন শ্রমিক আটকে ছিলেন। তবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের বের করে আনা হবে। শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনতে টানেলের উপরে 'র্যাট-হোল' খনন এবং উল্লম্ব ড্রিলিং করা হয়।
তাঁদের বের করে আনতে, টানেলের ভিতরে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে গিয়েছে। বের করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।
টানেল খননের কাজ আপাতত শেষ-ই বলা চলে। যে কোনও মুহূর্তে শ্রমিকদের বের করে আনা হবে। শ্রমিকদের বের করতে একটি ৪০০ মিমি পাইপ ঢোকানো হয়েছে। এর মাধ্যমে এনডিআরএফ-এর টিম শ্রমিকদের স্ট্রেচারে করে বের করে আনবে।
টানেলের ভেতরে এতদিন আটকে থাকা শ্রমিকদের জন্য এই কয়েকদিন যে বিভীষিকা ছিল, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এত কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁরা একবারে জন্যও সাহস হারাননি। আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য সুড়ঙ্গের বাইরে চিকিৎসকদের একটি দলও মোতায়েন করা হয়। তাঁরা নিয়মিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন এবং তাঁদের মনস্তাত্ত্বিকভাবেও উৎসাহিত করতে থাকেন।
উদ্ধার অভিযানস্থলে পাঁচ চিকিৎসকের একটি দল দিনে দু'বার আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কীভাবে শ্রমিকরা সুড়ঙ্গে রাত কাটাতেন?
শীত পড়তে শুরু করেছে। দেশের অন্য রাজ্যের মতো উত্তরাখণ্ডেও তাপমাত্রা ক্রমাগত কমছে। ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনরা আরও দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কীভাবে তাঁরা সুড়ঙ্গে রাত কাটাচ্ছিলেন তাই নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সকলে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, সিনিয়র ডাক্তার প্রেম পোখরিয়াল, বলেন, টানেলের ভিতরে কর্মীদের ঠান্ডা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, 'যেখানে ওঁরা আটকে আছেন, সেখানে চলাচলের জন্য প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা রয়েছে। তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁদের শীতের ভারী কাপড়ের প্রয়োজন নেই।'
ডঃ পোখরিয়াল বলেন, সৌভাগ্যক্রমে যেখানে শ্রমিকরা আটকা পড়েছিলেন, সেখানে জিওটেক্সটাইল শিটের বান্ডিল পড়ে ছিল। শ্রমিকরা সেটাকেই বিছানার মতো করে বানিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।
সুড়ঙ্গেই যোগব্যায়াম ও ব্যায়াম
কীভাবে শ্রমিকরা মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন? ডাঃ পোখরিয়াল বলেন, 'আটকে পড়া শ্রমিকরা সুড়ঙ্গেই যোগব্যায়াম ও ব্যায়াম করছিলেন। সকাল-সন্ধ্যা টানেলের ভেতরে হেঁটছেন।'
একইসঙ্গে, এক আধিকারিক বলেন, টানেলে শ্রমিকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কাটা যায়নি। ফলে সেই দিক দিয়ে কিছুটা স্বস্তি ছিল।
তিনি বলেন, ওঁরা ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেয়েছেন। ধ্বংসাবশেষের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহের কোনও ক্ষতি হয়নি। নির্মাণের সময়, সুড়ঙ্গের দেয়াল বরাবর বৈদ্যুতিক তারগুলি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেগুলি ভাল অবস্থাতেই ছিল। ফলে অন্তত একটু আলোর ব্যবস্থা ছিল অন্ধকার সুড়ঙ্গে।
অপর একজন আধিকারিক বলেন, সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, তোয়ালে, জামাকাপড়, অন্তর্বাস ইত্যাদি শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মোবাইল ফোনও দেওয়া হয়েছিল। তাতে সিনেমা এবং ভিডিও গেমও ছিল।
শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়া?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগে শ্রমিকদের তরল খাবার দেওয়া হলেও কয়েকদিন পর থেকে সলিড ডায়েট দেওয়া শুরু হয়। ডাঃ পোখরিয়াল বলেন, 'আমরা সকালে তাদের কাছে ডিম, চা এবং পোরিজ(ওটস, সুজি জাতীয়) পাঠাচ্ছিলাম। দুপুর ও রাতের খাবারে ডাল, ভাত, রুটি এবং সবজি খাচ্ছিলেন। তাঁদের খাওয়ার জন্য ডিসপোজেবল প্লেটও পাঠানো হচ্ছিল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্রমিকরা যাতে পর্যাপ্ত জল খান, তা নিশ্চিত করতে টানেলের মধ্যে পাইপের মাধ্যমে ওআরএস পাউডার পাঠানো হয়েছিল। তাছাড়া চোখের ড্রপ, ভিটামিন পিল এবং অন্যান্য এনার্জি ড্রিংকও পাঠানো হয়েছে। শুকনো ফল ও বিস্কুটও শ্রমিকদের কাছে পাঠানো হয়।
মেডিকেল টিমের নোডাল অফিসার ডাঃ বিমলেশ যোশি বলেন, কর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছিল, আটকে পড়া শ্রমিকদের সাথে কথা বলার সময় তাঁদের এমন কিছু বলা উচিত নয়, যাতে তাঁদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে ও হতাশা বাড়াতে পারে।