Women Reservation Bill: গত বেশ কয়েক বছর ধরে সংসদে আটকে থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিল এ বার বিশেষ অধিবেশনে পেশ হতে পারে। সূত্রের খবর, নতুন সংসদে মোদী সরকার প্রথম যে বিল পেশ করতে পারে তা হল মহিলা সংরক্ষণ বিল। মোদী মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে পাশ হওয়ার পর এই বিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ হতে পারে। এর আগে, রবিবার অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে, কিছু আঞ্চলিক দল এবং কংগ্রেস সাংসদ সংসদে এই বিলটি পাশের দাবি করেছিলেন।
মহিলা সংরক্ষণ বিল কী?
গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিলটিতে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। প্রায় ২৭ বছর ধরে অমীমাংসিত মহিলা সংরক্ষণ বিল এবার সংসদে পাস করাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার, তথ্য দেখায় যে লোকসভায় মহিলা সাংসদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের কম, যখন অনেক রাজ্য বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশেরও কম। এই বিলটি প্রথম সংসদে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬-এ পেশ করা হয়েছিল। বিলটিতে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে লোকসভায় ৭৮ জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন, যা মোট সাংসদের মাত্র ১৪ শতাংশ। রাজ্যসভায় মাত্র ৩২ জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন, যা রাজ্যসভার মোট সাংসদের ১১ শতাংশ।
মহিলা সংরক্ষণ বিলে যা রয়েছে
কোন দলগুলো সমর্থন করছে?
সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরুর আগে রোববার সর্বদলীয় বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পরে, কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "সমস্ত বিরোধী দল এই সংসদ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করার দাবি জানিয়েছে।" বিজেপির সহযোগী এবং এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল বলেছেন, "আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই। এই অধিবেশনেই মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হোক।'' বিজেডি এবং বিআরএস সহ অনেক আঞ্চলিক দলও মহিলা সংরক্ষণ বিল চালু করার দাবি জানিয়েছিল। বিজেডি সাংসদ পিনাকি মিশ্র বলেছেন যে নতুন সংসদ ভবনের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হওয়া উচিত এবং মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়া উচিত। সব দলই এই বিলকে সমর্থন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সূত্র বলছে, পুরনো বিলে কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তার পরই সমর্থক দলগুলির অবস্থান পরিষ্কার হবে।
বিল কেন প্রয়োজন?
জনসংখ্যার অর্ধেক সংসদ ও বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করবে বলে আশা করা হচ্ছে না। বর্তমান লোকসভায় ৭৮ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, যা মোট ৫৪৩ জনের ১৫ শতাংশেরও কম। রাজ্যসভায় মাত্র ৩২ জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন, যা রাজ্যসভার মোট সাংসদের ১১ শতাংশ। এর বাইরে যদি আমরা রাজ্যগুলির কথা বলি, তাহলে অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, গোয়া, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, সিকিম, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা সহ অনেক রাজ্যের বিধানসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশের কম। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের সরকারি তথ্য অনুসারে, বিহার, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লিতে ১০-১২ শতাংশ মহিলা বিধায়ক আছেন।
২৭ বছর ধরে শুধুমাত্র আলোচনায় মহিলা সংরক্ষণ বিল
১৯৯৬ সালে এইচডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। সেই সময় দেবগৌড়া ঘোষণা করেছিলেন যে মহিলারা সংসদ এবং বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ পাবেন। যা ক্ষমতায় তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে। তবে এই বিল পাশ হওয়ার আগেই দেবগৌড়ার সরকার চলে যায়। বিজেপি সেই সময়ে এই ইস্যুটি তুলেছিল, অটল বিহারীর সরকারও মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করতে পারেনি। সনিয়া গান্ধীর উদ্যোগে বিল পাশ করার চেষ্টা শুরু করে কংগ্রেস। মনমোহন সরকারও ২০১০ সালে রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করেছিল, কিন্তু লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে এই বিলটি আটকে যায়। ২০১৪ সালে বিজেপি এটিকে একটি বড় ইস্যু করে তোলে।
বর্তমান অবস্থা কী
সূত্রের খবর, সোমবার সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন, যেখানে এই বিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। কংগ্রেস, ভারত রাষ্ট্র সমিতি এবং বিজু জনতা দল সহ অনেক রাজনৈতিক দল এই বিলের অনুমোদনের দাবি করছে। বিলটি বিবেচনা ও পাশ করতে সংসদের প্রতিটি কক্ষে সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন।