বছরের নতুন ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গা পুজো (Durga Puja) একটি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুর বাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকী গোটা বিশ্বের বাঙালি।
দুর্গা পুজো একেবারে দোরগোড়ায়। তিলোত্তমার বিভিন্ন প্রান্ত সেজে উঠছে পুজোর আবহে। পুজোর বেশ কিছু মাস আগে থেকেই শুরু হয় যায় প্যান্ডেল তৈরি কাজ। গত কয়েক বছর ধরে থিম পুজোর প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে বেশীরভাগ ক্লাবগুলি। সেরার সেরা লড়াইয়ে জোরদার টেক্কা চলে ক্লাবে -ক্লাবে। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি (Ahiritola Sarbojanin Durgotsab Samity) এবছর ৮৪ তম বছরে পা দিল। কীভাবে সেজে উঠছে মণ্ডপ? এবছরের থিম কী? রইল খুঁটিনাটি...
এবছর এই পুজো মণ্ডপের থিম অবিনশ্বর - 'তোমায় নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণে'। যা নতুন রূপে বারবার ফিরে আসে তার সম্পর্কেই হয়তো এরকম কথা বলা যায়... এমনই এক বিষয় এবার আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির এবছরের পুজোর থিম। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের আদলে। শিবের ১০৮ নাম ও শিবের স্তোত্র দিয়ে হবে মণ্ডপসজ্জা।
১২ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথমটি হল সোমনাথ (Somnath Temple)। এই মন্দির গুজরাটে অবস্থিত। সোমনাথ হলেন শিব। এই 'অবিনশ্বর' কথাটি সোমনাথ মন্দিরের ক্ষেত্রও প্রযোজ্য। বিভিন্ন প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে ও শাস্ত্রে এই সোমনাথ ক্ষেত্র, প্রভাস ক্ষেত্রে বা প্রবাস তীর্থ নামে উল্লিখিত হয়েছে। যার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়, এই প্রভাস তীর্থ বা সোমনাথ প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো। অনেক প্রাচীনকাল থেকেই এই স্থানকে পুণ্য ক্ষেত্রগুলি মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। ইতিহাস বলে, বারংবার এই মন্দির কে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে ততবারই নতুন রূপে মন্দিরটি গড়ে তোলা হয়।
স্বাধীন ভারতে সোমনাথ মন্দির নির্মিত হয় এই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সহযোগিতায়। সমস্ত ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে আবার নতুন রূপ দেওয়া হয় মন্দিরকে। যে মন্দির আজও স্বযত্নে রক্ষিত রয়েছে। বারবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও, নতুন রূপে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এই বিখ্যাত মন্দির। বলা যায়, এই ইতিহাস অগণিত মানুষের জীবনের অনুপ্রেরণা রূপে অবিনশ্বর হয়ে আছে। দেবীর দুর্গার সঙ্গে শিবের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। শিব অর্থাৎ কল্যাণ বা শুভ। প্রতিটি মণ্ডপে দুর্গা মূর্তির মাথার উপর শিবের প্রতিকৃতি রাখা হয়। এই গুরুত্বকে মাথায় রেখেই এবছর এই থিমের বিষয়ে ভাবনা ও সজ্জা যতটা সম্ভব শিবময় করে তোলা হচ্ছে।
১৯৪০ সাল আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি-র মাতৃবন্দনার সূচনা হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন স্যার হরিশঙ্কর পাল। সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ,সমাজসেবী ও একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন জহর লাল চন্দ্র। মহাষষ্ঠীর দিন শাস্ত্রীয় পন্ডিতের মন্ত্রের উচ্চারণে শক্তির স্রোতধারা প্রবাহিত হত বিশ্বর মূলে। সেই পুণ্যলগ্নে প্রধান অথিতি ছিলেন অতুল্য ঘোষ। তবে তাঁর অসুস্থতার জন্য প্রধান অথিতির স্থান অলংকৃত করেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির অন্যতম সম্পাদক বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়। গত ৮৩ বছরে মাতৃবন্দনার শিল্পকলারও পরিবর্তন হয়। বহু প্রবীণ -নবীনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি এক নবদিগন্তের দিকে এগিয়ে চলে। বর্তমানে এই শারদোৎসবের মূল কান্ডারী সুশান্ত কুমার সাহা।