সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। মা লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পদের দেবী। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ঘরে ঘরে পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। ধন, যশ, খ্যাতি, সুস্বাস্থ্যের জন্য দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠে বাংলার প্রায় প্রতিটা পরিবার। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও নানা উপাচারে পদ্মে বিরাজমান লক্ষ্মীর পুজো করার রীতি সেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু জানেন, মা লক্ষ্মী কেন পদ্মাসনা? অর্থাৎ মা লক্ষ্মী পদ্মেই কেন উপবিষ্ট? জানুন পুরাণের ব্যাখ্যা।
পুরাণ মতে ক্ষীরোদ সাগরে মহানাগের উপরে শ্রী বিষ্ণুর সঙ্গে বিরাজ করেন মহালক্ষ্মী। আবার সনাতন ধর্ম অনসারে, বিশেষ ৫টি স্থানে লক্ষ্মীর বাস। আর পদ্ম একান্তই স্ত্রীয়ের প্রতীক। তাই দেবীকে পদ্মাসনা হিসেবেই কল্পনা করা হয়েছে সনাতন ধর্মে। আর ঠিক সেই কারণেই দেবীর পুজোয় পদ্ম অপরিহার্য। যদিও সনাতনী ঐতিহ্য অনুসারে, গজকুম্ভ অর্থাৎ হাতির কপালের মাঝখানে যে উঁচু অংশ সেখানেই থাকেন লক্ষ্মী। যে কারণে মা লক্ষ্মীর অনেক ছবির দুই পাশে হাতির অবস্থান দেখা যায়। অন্যদিকে জ্যোতিষশাস্ত্রে রয়েছে আবার ভিন্ন ব্যাখ্যা। জ্যোতিষ মতে, হাতের আঙুলের অগ্রভাবে বাস করেন দেবী। আর সেই কারণেই মানুষের অন্যতম কাজের অঙ্গ হল হাত ও আঙুল। এই অঙ্গই মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়।
হিন্দু শাস্ত্র আবার বলছে, লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। ধন সমৃদ্ধির আশায় অনেকেই বছর ভর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা করেন। আর কোজাগরী পূর্ণিমার দিন বিশেষ আয়োজনে পূজিতা হন দেবী। লক্ষ্মীকে শষ্যের দেবী কল্পনা করে, ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি,আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলিতে তাঁর পুজো হয়। এককথায় বলতে গেলে মাঠে ফসল হওয়ার সময়ই ধনদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন মানুষ।
সমাজ নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন, আদি মাতৃকাশক্তির প্রতিরূপ হলেন মা লক্ষ্মী। অন্য একটি মত বলছে, দেবীর আরও এক আবাস স্থল বিল্বপত্র বা বেল পাতার উল্টো দিক। এক্ষেত্রে একটা বিষয় উল্লেখ্য তা হল, ৩টি বেল পাতাকে দেবাদিদেব মহাদেবের ত্রিনয়ন রূপেরও কল্পনা করা হয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ২০২৩ -র দিনক্ষণ (Kojagori Lakshmi Puja 2023 Date)
আগামী ২৮ অক্টোবর (১০ কার্তিক), রবিবার পড়েছে এবছরের কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। ২৭ অক্টোবর রাত ৩/৪০/৫৫ থেকে ২৮ অক্টোবর রাত ১/৫৫/১৪ অবধি থাকবে পূর্ণিমা তিথি।
বাঙালি হিন্দু ঘরে লক্ষ্মী পুজো এক চিরন্তন উৎসব। অনেকেই সারা বছর প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয়। খারিফ শস্য ও রবি শস্য যেই সময় হয়, ঠিক সেই সময় বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর পুজোয়। তবে পুজোর উপাচার পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।