ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, ভগবান গণেশকে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অবতার বলা হয় এবং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর অবতার। কিন্তু তুলসী, যা ভগবান বিষ্ণুর খুব প্রিয়, এতই প্রিয় যে, ভগবান বিষ্ণুর আরেক রূপ শালগ্রামের সঙ্গে তুলসীর বিয়েও হয়েছে। সেই তুলসী ভগবান গণেশের পুজোয় নিষিদ্ধ। কিন্তু কেন এমন হল তা নিয়ে কিংবদন্তি কাহিনি রয়েছে।
একবার শ্রী গণেশ গঙ্গার তীরে ধ্যান করছিলেন। এই সময়ে ধর্মাত্মজের যুবতী কন্যা তুলসী বিবাহের ইচ্ছায় তীর্থযাত্রায় গমন করেন। দেবী তুলসী সমস্ত তীর্থস্থান পরিদর্শন করতে করতে গঙ্গার তীরে আগমন করেন।
গঙ্গার তীরে, দেবী তুলসী তরুণ যুবক গণেশকে দেখতে পান, যিনি তখন তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। শাস্ত্র অনুসারে, তপস্যায় মগ্ন গণেশজি একটি রত্নখচিত সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। তার সমস্ত অংশ চন্দন কাঠ দিয়ে আবৃত ছিল। তিনি গলায় পারিজাত ফুলের সঙ্গে সোনা ও মণিনমাণিক্যের মালা পরে ছিলেন। খুব নরম রেশমি পীতাম্বর তার কোমরে জড়িয়ে ছিল।
তুলসী শ্রী গণেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তার মনে গণেশকে বিয়ে করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছিল।
তুলসী তাঁর বিবাহের আকাঙ্ক্ষা থেকে গণেশের ধ্যান ভগ্ন করেছিলেন। তখন ভগবান গণেশ বলেন যে তুলসীর এভাবে তাঁর তপস্যা বিলীন করা অশুভ। তুলসীর অভিপ্রায় জানার পর গণেশ নিজেকে ব্রহ্মচারী বলে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
শ্রী গণেশ তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দেবী তুলসী খুবই দুঃখ পান এবং ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তিনি শ্রী গণেশকে দুটি বিয়ের অভিশাপ দিয়েছিলেন। এতে শ্রী গণেশও তুলসীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তোমার বিয়ে হবে একজন অসুরের সঙ্গে।
অসুরের স্ত্রী হওয়ার অভিশাপ শুনে তুলসী শ্রী গণেশের কাছে ক্ষমা চাইলেন। তখন শ্রী গণেশ তুলসীকে বললেন শঙ্খচূর্ণ রাক্ষসের সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে। তবে গণেশ এও বলেন, তুলসী ভগবান বিষ্ণু ও শ্রী কৃষ্ণের প্রিয় হওয়ার পাশাপাশি কলিযুগে বিশ্বকে জীবন ও মোক্ষ দান করবেন। কিন্তু আমার পূজায় তুলসী নিবেদন শুভ বলে গণ্য হবে না।
সেই থেকে গণেশের পূজোয় তুলসীকে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
সেই কারণে গণেশের পুজোয় ভুলেও কখনও তুলসি পাতা ব্যবহার করা হয় না। আর যদি কেউ ভুল করে করলে তাহলে কিন্তু বিপদ!
তুলসি পাতা ছাড়া কোনও পুজোই সম্পন্ন হয় না। কিন্তু গণেশের পুজোয় ব্রাত্যই থাকলেন তুলসী। শুধু গণেশ ঠাকুর নয়, দেবাদিদেব শিবের পুজো করার সময়ও তুলসী পাতা নিবেদন করতে মানা করা হয়। কারণ শিবের হাতে মারা গিয়েছিলেন তুলসির স্বামী। এই ঘটনার পরে দেবী তুলসির মা, শিব ঠাকুরকে অভিশাপ দেন যে তার পুজোয় কোনও দিন তুলসী ব্যবহার হবে না। সেই থেকে দেবাদিদেবের অরাধনা তুলসী পাতাকে বাদ দিয়েই হয়ে থাকে। তাই শিবপুজোতে বেলপাতা নিবেদন করা হয়।