সারা দেশজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে মহা শিবরাত্রি (Mahashivratri 2022)। ভগবান শিবের আরাধনায় মেতে উঠেছেন ভক্তরা। মন্দিরে মন্দিরে চার প্রহরের পুজোর আয়োজন। ভোলা মহেশ্বরকে সাধ্যমত তুষ্ট করার চেষ্টার ভক্তরা। তবে দেবাদীদেবকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও রয়েছে ভক্তদের মনে। যেমন, কেন তিনি বাঘছাল পরেন? কেনই বা তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্রের অবস্থান? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মর্ত্যবাসীর মনে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভোলানাথের (Lord Shiva) অঙ্গসজ্জা সংক্রান্ত তেমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর।
বাগছালেই কেন দেখা যায় ভোলানাথকে?
শিবপুরাণ অনুসারে, দেবাদীদেব মহাদেব আদুর গায়ে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। একবার তিনি একটি বনে পৌঁছান, যেখানে কয়েকজন মুনিঋষি তাঁদের পরিবার নিয়ে বাস করতেন। শোনা যায়, শিবকে দেখে আকৃষ্ট হন সেখানে বসবাসকারী মহিলারা, যাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অন্যান্য ঋষিমুনিরা। কেন ওই মহিলারা একজন যুবা ঋষির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, এই ছিল ক্ষোভের কারণ। তাই তাঁরা শিবকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেইমতো তাঁরা একটি গর্ত খুঁড়ে তারমধ্যে একটি বাঘকে ছেড়ে দেন। কিন্তু তাতে কি আর মহাদেবকে জব্দ করা যায়? শিব খুব সহজেই সেই বাঘটিকে হত্যা করে সেটির চামড়া নিজের দেহে জড়িয়ে নেন। তারপর থেকে কেবল বাঘছালই পরতে শুরু করেন মহাদেব।
শিবের মাথায় কেন অর্ধচন্দ্রের অবস্থান?
শোনা যায়, প্রজাপতি দক্ষর ২৭ কন্যার বিয়ে হয়েছিল চন্দ্রদেবের সঙ্গে। তবে ২৭ জন স্ত্রীয়ের মধ্যে রোহিণীকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন চন্দ্রদেব। ফলে তাঁর বাকি স্ত্রীয়েরা খুবই অসন্তুষ্ট হন। বাবার কাছে অভিযোগও জানান তাঁরা। মেয়েদের দুঃখে কষ্ট পান দক্ষ। তিনি জামাইকে ডেকে বোঝান। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয় না। যার জেরে রেগে গিয়ে তিনি জামাইকে অভিশাপ দেন। বলেন, এবার থেকে ম্লান হতে থাকবে চন্দ্রের ঔজ্জ্বল্য। সেই শুনে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চন্দ্রদেব। নিজের ঔজ্জ্বল্য বাঁচাতে ছুটে গেলেন মহাদেবের কাছে। সব শুনে শিব বললেন, অভিশাপ তো খণ্ডানো যাবে না, কিন্তু তিনি অন্যভাবে চেষ্টা করবেন। শিব বললেন, এবার থেকে ১৫ দিন অর্থাৎ শুক্লপক্ষে চন্দ্রদেব ক্রমশ উজ্জ্বল হবেন। বাকি ১৫ দিন, অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষে চন্দ্রদেব ধীরে ধীরে নিজের ঔজ্জ্বল্য হারাবেন। এইভাবে সবদিক রক্ষা করলেন মহাদেব। কিন্তু সেখানেও সমস্যা মিটলো না। কৃষ্ণপক্ষে নিজের ঔজ্জ্বল্য হারাতেই দুঃখে কাতর হয়ে পড়লেন চন্দ্রদেব। লজ্জায়-অপমানে ডুব দিলেন মহাসাগরে। এদিকে চাঁদ না উঠলে মহাবিপদ। সৃষ্টির নিয়ম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তখনও সেই ত্রাতার ভূমিকায় মহাদেব। চন্দ্রদেব যাতে কোনওভাবেই নিজেকে লুকোতে না পারেন, তাই মহাদেব কৃষ্ণপক্ষের এক ফালি চাঁদকে নিজের মাথায় ধারণ করলেন। সেই থেকেই মহাদেব হলেন চন্দ্রশেখর।
মহাদেবের গলায় কুণ্ডলিনী সাপ কেন থাকে?
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান শিব হলেন আদি তথা প্রথম গুরু। তিনিই তন্ত্র সাধনা ও ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার পথের সন্ধান দিয়েছেন। ভগবান শিবই প্রথম ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর দিশা দেখিয়েছিলেন। তন্ত্রশাস্ত্রের কুণ্ডলিনী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মহাদেবের কাছে রয়েছে। আর সেই কারণেই কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক সাপকে তাঁর গলায় দেখা যায়। মনে করা হয়, ভোলানাথ কুণ্ডলিনী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাই তাঁর গলায় সাপের অবস্থান।
আরও পড়ুন - কবে খুলছে কেদারনাথ মন্দির? মহাশিবরাত্রিতেই দিনক্ষণ জানাল কর্তৃপক্ষ
ভোলানাথের মাথায় মা গঙ্গার অবস্থান কেন?
পুরাণ মতে ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মা গঙ্গা যখন মর্ত্যে নেমে আসছিলেন সেই সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে রীতিমতো পৃথিবী প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত ভগীরথ দেবাদীদেবের শরণাগত হন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গঙ্গাকে নিজের জটায় আবদ্ধ করেন মহাদেব। তারপর সেখান থেকেই সরু ধারায় বেরিয়ে আসেন মা গঙ্গা। সেই সময় থেকে শিবের জটায় মা গঙ্গার অবস্থান।
ত্রিশূলে কেন থাকে ডমরু?
মহাদেবের ত্রিশূল মূলত তিনটি শক্তি, অর্থাৎ জ্ঞান, ইচ্ছা ও সম্মতির প্রতীক। আর সেই ত্রিশূলে সবসময়ই বাঁধা থাকে ডমরু। এই ডমরু হল বেদ ও তার উপদেশের প্রতীক, যা মানুষকে জীবনে এগিয়ে চলার পথ দেখায়।