শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে পঞ্চমী তিথিতে নাগ পঞ্চমী উৎসব পালন করা হয়। তিথি অনুযায়ী এবার নাগ পঞ্চমী ২ অগাস্ট পড়েছে। নাগ পঞ্চমীর দিন মহিলারা নাগদেবতার পুজো করেন এবং সাপেদের দুধ পান করান। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী সাপেদের পূজনীয় বলে মনে করা হয়।
নাগপঞ্চমীর দিন সাপেদের পুজো করা হয় এবং গরুর দুধ দিয়ে স্নান করানো হয়। মনে করা হয় যে লোকেরা নাগপঞ্চমীর দিন নাগদেবতার সঙ্গে ভগবান শিবের পুজো এবং রুদ্রাভিষেক করা হলে তাদের জীবনে কালসর্প দোষ শেষ হয়ে যায় এবং সঙ্গে রাহু এবং কেতুর অশুভ তার দূর হয়ে যায়।
মহাকালের নগরী উজ্জয়িনীকে মন্দিরে শহর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই শহরে প্রত্যেক গলিতে একটা না একটা মন্দির অবশ্যই রয়েছে। নাগপঞ্চমী উদযাপনে মহাকালেশ্বর মন্দির এর তৃতীয় ভাগে নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরের সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হলো এই মন্দিরের দরজা বছরের শুধুমাত্র ২৪ ঘন্টার জন্য খোলা হয়। এর বিশেষত্ব সম্পর্কে আসুন জেনে নিই।
নেপাল থেকে আনা হয়েছিল প্রতিমা
ভগবান নাগচন্দ্রেশ্বর মূর্তি অত্যন্ত পুরনো এবং এটি নেপাল থেকে আনা হয়েছিল। নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দির এর যে অদ্ভুত প্রতিমা বিরাজমান তার বিষয়ে বলা হয় যে এটি ১১ শতাব্দীতে আনা হয়েছিল। এই প্রতিমায় শিব-পার্বতী নিজের পুরো পরিবারের সঙ্গে আসনে বসে রয়েছেন এবং এখানে তাদের মাথার ওপরে সাপ ফণা তুলে বসে রয়েছেন।
এই প্রতিমা ছাড়া গোটা বিশ্বে কোথাও এমন প্রতিমা নেই। এটি পৃথিবীর একমাত্র মন্দির, যেখানে ভগবান শিব নিজের পরিবারের সঙ্গে সাপেদের ছায়ায় বিরাজমান রয়েছেন।
ত্রিকাল পুজোর পরম্পরা
মান্যতা অনুসারে ভগবান ত্রিকাল পুজোর পরম্পরা রয়েছে পুজোর মানে হল যে তিনটি আলাদা আলাদা সময় পুজো। প্রথম পুজো মধ্যরাত্রিতে মহানির্বাণে হয়। দ্বিতীয় পুজো নাগ পঞ্চমীর দিন দুপুরে শাসন দ্বারা করা হয় এবং তৃতীয় পুজো নাগপঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায় ভগবান মহাকালের পুজোর পরে মন্দির সমিতি করে। এরপর রাত বারোটার সময় ফের এই মন্দিরের দরজা আগামী এক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
পৌরাণিক কথা
মান্যতা অনুসারে সাপেদের রাজা তক্ষক ভগবান শিবকে আরাধনা করে তাঁকে প্রসন্ন চেষ্টা করেন এবং সাপেদের রাজা তক্ষক নাগকে অমরত্ব বরদান দেন শিব। বর পাওয়ার পর তক্ষক প্রভুর সান্নিধ্যেই বসবাস করা শুরু করে দেন। কিন্তু মহাকাল বনে বাস করার আগে তার এই ইচ্ছে ছিল যে তার গোপনীয়তায় কেউ যেন বিঘ্ন না ঘটায়।
এ কারণে এই প্রথা চলে আসছে যে শুধুমাত্র নাগপঞ্চমীর দিন তাঁকে কেউ দর্শন করতে পারবেন। বাকি সারা বছর তাঁকে কেউ দর্শন করবেন না। এই পরম্পরা অনুসারে তাই মন্দির বন্ধ থাকে সারা বছর। নাগপঞ্চমীর দিন দর্শন এর জন্য উপলব্ধ শুধুমাত্র ২৪ ঘন্টা।
নাগপঞ্চমীর শুভ মুহূর্ত
নাগপঞ্চমী মঙ্গলবার ২ অগাস্ট ২০২২-এ পড়েছে। পঞ্চমী তিথি প্রারম্ভ অগাস্ট ২০২২ এর সকালে ৫ টা বেজে ১৩ মিনিটে শুরু হচ্ছে। পঞ্চমী তিথি সমাপ্ত হচ্ছে ৩ অগাস্ট ২০২২ এর সকাল ৫ টা বেজে ৪১ মিনিটে। নাগ পঞ্চমী পূজার মুহূর্ত সকাল ৬ টা বেজে ৫ মিনিট থেকে ৮ টা বেজে ৪১ মিনিট পর্যন্ত মোট ২ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট।
নাগপঞ্চমী পুজো বিধি
নাগপঞ্চমীর দিন অনন্ত, বাসুকি, পদ্ম, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলির, কর্কট, শঙ্খ, কালিয়া এবং পিঙ্গল নামের নাগদেবতার পুজো করা হয়। পুজোতে হলুদ, চাল এবং ফুল চড়ানো হয়। কাঁচা দুধে ঘি এবং চিনি মিলিয়ে নাগ দেবতাকে অর্পণ করা হয়। এরপরে নাগ দেবতার আরতি করা হয় এবং এরপর নাগপঞ্চমীর কথা অবশ্যই শুনতে হবে।