মন্দিরের ভিতর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় মা কালীকে। এক আধদিন নয়, সারাবছর। এমন প্রথার চল রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি স্থিত লছিপুরে। শুধুমাত্র বিজয়া দশমীর দিন শিকলের বাঁধন খোলা হয়। সেই দিন প্রতিমান নিরঞ্জন হয়। সেই কাঠামো তুলে এনে ফের মূর্তি বানানো হয়।
কুলটির লছিপুরের ওই মন্দিরে অন্য দেবদেবীর মূর্তি থাকলেও প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কালীমা খুব জাগ্রত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রাচীনকাল থেকে ওই মন্দিরে পুজো হয়ে আসছে। যদিও নথি বলছে, ৬২ বছর ধরে মন্দিরে পুজো-অর্চনা হয়। মন্দিরটি আগে মাটির ঘরের ছিল। সেই সময় ইন্দু দিয়াসি নামে একজন পুজো করতেন। পরে মাটির ঘরের মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পাকা মন্দির করা হয়। কথিত আছে দেবীর আরাধনাকারী ইন্দু দিয়াসির মৃত্যু হলে দেবী মন্দির ত্যাগ করে চলে যেতে চান। সেই সময় নাকি ইন্দু দিয়াসির একটি হাত কেটে এনে দেবীর যাত্রা ভঙ্গ করা হয়। তারপর থেকেই দেবীকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়। স্থানীয়দের মধ্যে মা কালী খুব জাগ্রত। তিনি চঞ্চল। সেজন্য রাত্রিকালীন ভ্রমণে বের হতেন।
কালীপূজোর দিন খুব ধুমধাম সহযোগে পুজো হয়। বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের আগমন ঘটে মন্দিরে। বর্তমানে ওই মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ষষ্ঠী পণ্ডিত। মন্দিরের আর এক পুরোহিত বিশাল চৌধুরী বলেন, 'এই মন্দিরের অনেক ইতিহাস রয়েছে। এখানে পিণ্ড দান করা হয়। কালীপুজোর দিন রাতে পুজো হয়। খিচুড়ি ভোগ হয়। এরপর ৭ দিন ধরে যজ্ঞ চলে।'
পুজো কমিটির সদস্য বলরাম বাউরি বলেন, 'আমাদের মন্দিরটা খুব পুরোনো। বাপ-দাদার আমল থেকেই পুজো হয়। শুনেছি খুবই জাগ্রত। মা নাকি ঘুরে বেড়াত মন্দির ও পাড়ায়। এরপর থেকেই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় মা-কে। বিজয়া দশমীর দিন শিকল খোলা হয় বিসর্জনের সময়।'
এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান,প্রতিবার পুজোর সময় বহু ভক্ত বাইরে থেকে আসেন। সারা বছর মা-কে দেখার জন্য মন্দিরে ভিড় হয়। পুজো দেওয়া হয়। দিন দিন ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগে এখানে মাটির মন্দির ছিল। পরে তা পাকা করা হয়। ছোটো থেকেই মন্দির সম্পর্কে অনেক প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে।