পুজো শেষ তবে তার রেশ এখনও কাটেনি। আর বাঙালিদের আরও এক জনপ্রিয় এবং প্রাণের পুজো হল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। প্রত্যেক বাড়িতেই এই লক্ষ্মী পুজো করা হয়ে থাকে। এই পুজোর অন্যান্য নিয়মের মধ্যে অন্যতম হল মা লক্ষ্মীকে ভোগ নিবেদন করা। অধিকাংশ বাড়িতেই মা লক্ষ্মীকে ভোগ হিসাবে খিচুড়ি ও ল্যাবড়া সহ ভাজাভুজি দিয়ে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু বাঙাল বাড়িতে খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে ইলিশ মাছের ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। কিন্তু কেন ইলিশের ভোগ দেওয়া হয় লক্ষ্মীকে জানেন?
জোড়া ইলিশের ভোগ
যাঁরা বাঙাল তাঁদের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজোয় লাবড়া, খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে ইলিশ মাছ দেওয়া হয়। একজোড়া ইলিশ ভোগ দেওয়া হয় মা লক্ষ্মীকে। কখনও আলু, বেগুন, কখনও বা কুমড়ো দিয়ে রান্না করা হয় ইলিশের ঝোল। আর দেওয়া হয় এক খিলি পান। আসলে এই রীতি একেবারেই পূর্ববঙ্গীয়দের। অর্থাৎ বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুজোয় নিবেদন করা হয় ইলিশ মাছ। অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে লক্ষ্মীপূজার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ভোগ নিবেদন করা যেতে পারে সেটা আঞ্চলিক এবং জায়গা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
মাছের পাঁচ পদ রান্না
পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে এইদিন মাছের পাঁচ পদ রান্না করা হয় । এছাড়া মা লক্ষ্মীর ভোগে সব বাড়িতেই নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, নারকেলের নানা মিষ্টি, খই, মুড়কি, ফলমূল তো থাকে।
কেন ইলিশের ভোগ দেওয়া হয়?
পূর্ববাংলার লক্ষ্মী পুজোতে আমিষ দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। পূর্ববঙ্গে অনেক পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় মাছ ভোগ দেওয়ার প্রচলন আছে বলে জানা যায়। বিশেষত ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চলে দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। সেই কারণে পূর্ববঙ্গের জনপ্রিয় পদ ইলিশ মাছকে ভোগ হিসেবে দেওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয়। এছাড়া অন্ন ভোগে খিচুড়ি, ভাজা, শাক, চাটনি, ডাবের জল ইত্যাদি দেওয়া হয়। আবার কেউ কেউ অন্ন ভোগের জায়গায় দেন লুচি ভোগ, সঙ্গে থাকে তরকারি, ভাজা, সুজির পায়ে যা পশ্চিমবঙ্গের অনুকরণে করা হয়।
পূর্ববঙ্গের রীতি
পূর্ববঙ্গ থেকেই জোড়া ইলিশ দেওয়ার রীতি চলে এসেছে এই বাংলাতেও। বাংলাদেশ থেকে যে সব মানুষ এই বাংলাতে চলে এসেছেন তাঁরা তাঁদের সঙ্গে করে এই রীতি বহন করে এনেছেন। তাই বাঙাল বা পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে ইলিশ মাছ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।