শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন অর্থাৎ জন্মাষ্টমীতে বাবা লোকনাথ (Baba Loknath) জন্মগ্রহণ করেন ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগস্ট ( বাংলায় ১৮ ভাদ্র, ১১৩৭ বঙ্গাব্দ)। কচুয়া গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে, রামনারায়ণ ঘোষাল এবং মাতা কমলাদেবীর চতুর্থ পুত্র তিনি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল যে ছেলে ব্রহ্মচারী (Lokenath Brahmachari) হবেন। এদিকে তাঁর মা, ছেলেকে দূরে যেতে দিতে চাইছিলেন না কখনই। শেষ পর্যন্ত উপনয়নের জন্য বাবা লোকনাথ আচার্য গাঙ্গুলীর শিষ্যত্ব লাভ করেন। সেদিনই একই সঙ্গে তাঁর প্রিয় বন্ধু বেণীমাধব চক্রবর্তীও শিষ্যত্ব লাভ করেন।
লোকনাথের আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে অনেক প্রচলিত কথা ও বিশ্বাস আছে। মনে করা হয় সব বিপদেই তাঁকে স্মরণ করলে রক্ষা করেন তিনি।
লোকনাথ বাবার বাণী
"রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়বে আমাকে স্মরণ করিয়ো, আমি রক্ষা করিবো"- মেনে চলেন তাঁর অসংখ্য ভক্তেরা।
বিপদেই তাঁকে স্মরণ করলে রক্ষা করেন তিনি
* অনেকে মনে করেন, বাবা লোকনাথ জাতিস্মর। তিনি অন্যের মনের ভাব অবলীলায় জানতে পারতেন বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
* এছাড়াও তিনি অন্যের রোগ নিজ দেহে এনে সেই রোগীকে রোগমুক্ত করতে পারতেন। বাবা লোকনাথ অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন।
* প্রচলিত আছে, একবার ডেঙ্গু কর্মকার নামের এক ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় হেরে যাবার সম্ভাবনা আছে বলে বাবা লোকনাথের কাছে আসেন। তাঁর প্রার্থনায় বাবা লোকনাথ তাঁকে অভয় প্রদান করেন। যে মামলাটি কোনও ভাবেই জেতার কথা নয়, সেটি হজেই জিতে যান তিনি। এরপর বাবা লোকনাথের আধ্যাত্মিক শক্তি দেখে ডেঙ্গু কর্মকার তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: দেবীর আগমন-গমনে কী বার্তা দিচ্ছে এবার! ধরায় ফিরবে সুদিন?
* আরও একটি কথিত তথ্য পাওয়া যায়। একবার বারদীর পাশের এক গ্রামে ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে একটি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ে সকলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা লোকনাথের কৃপায় সব রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
* বারদীতেই যখন বাবা লোকনাথের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানকার লোভী ব্রাহ্মণসমাজ তাঁকে হিংসে করা শুরু করেন। সেই গ্রামের জমিদারের ইচ্ছায় কামাখ্যা নামের এক অহংকারী কালী পূজককে বাবা লোকনাথের সিদ্ধিজ্ঞান লাভের প্রমাণ দিতে বলা হয়। কামাখ্যা, কথা দেন যে, যদি বাবা লোকনাথ সিদ্ধপুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পারেন, তবে তিনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: পুজোয় ফুল আবশ্যক! জানুন এর আসল মাহাত্ম্য
এরপর বাবা লোকনাথকে কামাখ্যা এবং শিষ্যের সহায়তায় ধুতরা ফুল এবং ভয়ঙ্কর সাপের বিষ দেওয়া হয়। স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করার পর সবাই চিতা সাজিয়ে রাখেন। এমনকি তাঁকে অজ্ঞানরত অবস্থায় শোয়ানো পর্যন্ত হয়। কিন্তু মশাল হাতে নেওয়ার পরে লক্ষ্য করা যায় যে, তাঁর ওপরে অবিরত ধুতরা ফুল পড়তে থাকে। এছাড়াও তিনি তাঁর মাকে বলেছিলেন যে তাঁর মায়ের হাতের দুধ তাঁর মৃত্যুকেও জয় করতে পারে। সেজন্য তাঁর মা তাকে দুধ পান করিয়ে দেন চিতায় শয়নরত অবস্থায়। কিন্তু সকলকে অবাক করে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপরই সমগ্র ব্রাহ্মণসমাজ এবং কামাখ্যা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
* আরও বিভিন্নভাবে বাবা লোকনাথ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বলেই বিশ্বাস সকলের।
আরও পড়ুন: বিনা সমারোহে পালিত হচ্ছে মায়াপুর ইস্কনের চন্দনযাত্রা উৎসব!
লোকনাথ ব্রহ্মচারীরদেহত্যাগ
বাবা লোকনাথ, ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন, ১৬০ বছর বয়সে বাংলাদেশের নারায়ণগন্জের সোনারগাঁওয়ের বারদীতে তাঁর দেহ রাখেন। কিন্তু আজও তাঁর অগণিত ভক্তেরা নিষ্ঠা করে তাঁর পুজো করেন। মনে করা হয়, মাখন ও মিশ্রিতেই সন্তুষ্ঠ হন বাবা।
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মহামন্ত্র
"জয় বাবা লোকনাথ, জয় মা লোকনাথ, জয় শিব লোকনাথ, জয় ব্রহ্ম লোকনাথ, জয় গুরু লোকনাথ।"