পবিত্র শ্রাবণ মাস চলছে। এই মাসে মহাদেবের সঙ্গে দেবী পার্বতীরও পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, শ্রাবণ মাসে সব নিয়মকানুন মেনে ভোলেনাথের পুজো করলে, জীবনে সর্বদা সুখ ও সমৃদ্ধি থাকে। অনেকেই রুদ্রাক্ষ পরতে চান এবং শ্রাবণ মাস রুদ্রাক্ষ পরার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
রুদ্রাক্ষ পরলে ভগবান শিবের আশীর্বাদ সর্বদা সেই ব্যক্তির উপর থাকে। এটি পরিধান করলে, সমস্ত ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। বিজ্ঞানেও রুদ্রাক্ষ অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। এটি অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে।
রুদ্রাক্ষের গুরুত্ব (Rudraksha Significance)
রুদ্রাক্ষ হল গাছের ফলের বীজ। রুদ্রাক্ষের ঔষধি ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বও রয়েছে। বিশ্বাস অনুযায়ী, শিবের অশ্রু থেকে রুদ্রাক্ষের জন্ম হয়েছিল। রুদ্রাক্ষ পরিধান ও ব্যবহারে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। রুদ্রাক্ষ অকাল মৃত্যু এবং শত্রু বাধা থেকে রক্ষা করে। মোট চোদ্দ মুখী রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায় এবং এর বাইরে গৌরী-শঙ্কর ও গণেশ রুদ্রাক্ষও পাওয়া যায়।
রুদ্রাক্ষ পালনে সতর্কতা (Rudraksha Do's & Dont's)
লাল সুতো বা হলুদ সুতোয় রুদ্রাক্ষ পরুন। এছাড়াও, পূর্ণিমা, অমাবস্যা বা সোমবার রুদ্রাক্ষ পরা উত্তম বলে মনে করা হয়। এই শ্রাবণ মাসের যে কোনও দিন রুদ্রাক্ষ পরা যেতে পারে। কারণ শ্রাবণের প্রতিটি দিনই শুভ বলে মনে করা হয়। রুদ্রাক্ষ ১, ২৭, ৫৪ এবং ১০৮ সংখ্যায় পরিধান করা উচিত। রুদ্রাক্ষ পরার পর সাত্ত্বিকতা অনুসরণ করা উচিত। ধাতুযুক্ত রুদ্রাক্ষ পরা আরও ভাল। এমন রুদ্রাক্ষ মালা পরবেন না, যা অন্য কেউ পরেছে আগে। এছাড়াও, ঘুমানোর সময় রুদ্রাক্ষের মালা খুলে রাখতে হবে।
রুদ্রাক্ষের প্রকারভেদ ও গুণাগুণ
একমুখী রুদ্রাক্ষ
এতে দৈবশক্তি থাকে। বাধা -বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এই ধরণের রুদ্রাক্ষ পরলে। মনে করা হয় একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণের ফলে বৈষয়িক লাভ বেশি হয়।
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ
প্রায় চ্যাপ্টা আকৃতির এই রুদ্রাক্ষ সমৃদ্ধি ও সুরক্ষার শক্তি থাকে। মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। মনে করা হয় এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে কেউ বশ করতে পারে না।
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ পরলে জ্বর উপশম হয়। এটি দৈবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। এতে ত্রিলোক - আকাশ, মর্ত্য ও পাতালের যাবতীয় উপশক্তি নিহিত থাকে।
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ
শোনা যায় ব্রহ্মার প্রভাবেই চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি হয়। এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মন বসাতে খুব ভাল কাজ দেয়। এটি গলায় ধারণ করলে শত্রু ক্ষতি করতে পারে না। সেই সঙ্গে বাস্তব জীবনেও শ্রীবৃদ্ধি হয়।
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ
এই ধরণের রুদ্রাক্ষ পাপনাশক এবং শান্তিপ্রদানকারী। তবে এটি একসঙ্গে তিনটি ধারণ করতে হয়। তাহলে যে কোনও মনস্কামনা পূরণ হয়।
ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ
কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এই ধরণের রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে বলা হয়। এর ফলে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের ফল প্রকাশ পায়।
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ
এটি রোগ নিবারক ও সমৃদ্ধশালী। সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ কামরূপ। বিশেষত মণিবন্ধনে এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সুফল প্রাপ্তি হয়।
দশমুখী রুদ্রাক্ষ
কামনা পূরণে এই ধরণের রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে বলা হয়। এটি বিপদনাশক এবং রোগ ব্যসধি নিবারক।
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
স্বয়ং রুদ্রাক্ষই একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ। এটি ধারণ করলে বিজয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
এটি সহজে পাওয়া যায় না। তবে ধারণ করতে পারলে, রোগ, চিন্তা, ভয়, শোক ইত্যাদি থেকে মুক্তি মেলে।
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ
রুদ্রদেবের নয়ন থেকে চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। তাই বলাই বাহুল্য এর গুণ অপরিসীম। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি মেলে।