মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে পুজিত হন দেবী সরস্বতী। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠবেন সকলে। পলাশ (Palash Flower) না থাকলে সরস্বতী পুজো (Sarawati Puja) সম্পন্ন হয় না। তবে জানেন কেন এই পুজোয় পলাশ ফুলের এত মাহাত্ম্য? রইল বিস্তারিত...
সরস্বতী পুজোয় পলাশ ফুল থাকা আবশ্যক। তবে এর কারণ অনেকরই অজানা। যদিও এই আচারের সঙ্গে অনেকগুলি ব্যাখ্যা বা কারণ প্রচলিত আছে। সরস্বতী পুজোর আরেক নাম 'বাসন্তী পঞ্চমী'। মূলত বসন্ত কালেই পড়ে এই পুজোর তিথি। আর বছরের এই সময়েই বিশেষত রাঢ় অঞ্চলগুলি রাঙা হয়ে যায় পলাশ ফুলে। তাই মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীকে পলাশ ফুল অর্পণ করা হত। আর সেই রীতিই এখনও প্রচলিত আছে।
এছাড়াও পুরাণ মতে, দেবী সরস্বতীর সঙ্গে প্রজনন এবং উর্বরতা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব মোচনের সম্পর্ক রয়েছে। ঋষি গৃৎসমদ ঋক্মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি।’ যেখানে সরস্বতীকে মাতৃশ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠ নদী এবং শ্রেষ্ঠ দেবীরূপে উপস্থাপন করা হয়েছেন। এছাড়াও ব্যুৎপত্তিগত অর্থেই সরস্বতী নদী। সরস্ (জল) + মতুপ্ + ঙীপ্ (অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গবাচক ‘ঈ’ = সরস্বতী। নদীদের মধ্যে তিনি শুদ্ধা, ‘নদীনাং শুচির্যতী’, আসমুদ্র তার ধারপথ, ‘গিরিভ্য আসমুদ্রাৎ’।
শুধু তাই নয়, সরস্বতী পুজোর সময়কাল মাঘী শ্রীপঞ্চমী তিথি। জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘শীতকাল হল জড়তার কাল। মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথি থেকেই শীতের জড়তা কেটে যেতে থাকে, ঋতুতে লাগে প্রথম বসন্তের ছোঁয়া। সরস্বতীর আবির্ভাবে সকল জড়তামুক্তি, মনেরও, ঋতুরও।’
পলাশ ফুল, সরস্বতী পুজোর অন্যতম উপচার। ঋতুমতী নারীই গর্ভধারণে সমর্থ, তা কারো অজানা নয়। আর পলাশ রক্তবর্ণ। ঋতুমতীর রজোদর্শনের রং তাই। সেজন্যে বলা হয়, এর প্রতীক হিসেবে শ্বেতশুভ্রা দেবী হয়ে উঠেছেন ‘পলাশপ্রিয়া’।
এটা যে কারও কল্পনা তা নয়। জেনে রাখা ভালো, পলাশ পাতা আজও বন্ধ্যাত্ব দূর করতে ব্যবহৃত হয়। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো লাল মাটি অধ্যুষিত অঞ্চলে পুত্রসন্তান লাভের জন্যে মহিলারা পলাশপাতা বেটে খেতেন। এছাড়াও সরস্বতী পুজোর ঠিক পরের দিন শীতল ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয়। মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে সন্তান হয় বলেই বিশ্বাস। আর সরস্বতী পুজোর ঠিক পরদিন ঠান্ডা খাবার খেয়ে তাঁরই অর্চনা করা হয়। এইসব কারনেই পলাশ ফুল ছাড়া 'পলাশ প্রিয়া' সরস্বতীর পুজো সম্পন্ন হয় না।