সামনেই শিবরাত্রি। দেশজুড়ে মহাসমারোহে পূজিত হবেন দেবাদিদেব। মহাদেবকে তার প্রিয় জিনিস নিবেদন করে, নিষ্ঠা করে পুজো করলে বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। বেলপাতা, ধুতুরা, আকন্দ, বেল, ভাং ইত্যাদি পছন্দ করেন শিব। এছাড়া অন্যান্য দেবতাদের মতো শিব কোনও ঐশ্বরিক অলঙ্কার ও পোশাক পছন্দ করেন না। তিনি বাঘছাল পরে থাকেন এবং শরীরে কেবল ভস্ম মেখে করেন। সেটাই তার অলংকার। তবে অনেকেরই অজানা ভোলেনাথ কেন গায়ে ছাই মাখেন। জানুন এর পৌরাণিক ব্যাখ্যা।
শিবপুরাণের ব্যাখ্যা
ভগবান শিব সারা শরীরে ভস্ম লাগাতে থাকেন। শিব ভক্তরা কপালে ভস্মের তিলক লাগান। শিবপুরাণে এই নিয়ে একটি কাহিনি পাওয়া যায়। এক সন্ন্যাসী অনেক তপস্যা করে শক্তিশালী হয়েছিলেন। তিনি কেবল ফল এবং সবুজ পাতা খেতেন, তাই তাঁর নাম ছিল পর্ণাদ। তপস্যার ফলে সেই সন্ন্যাসী বনের সমস্ত প্রাণীর উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। একবার সন্ন্যাসী তার কুঁড়েঘর মেরামতের জন্য কাঠ কাটছিলেন, এমন সময় তার আঙুল কেটে যায়। সন্ন্যাসী দেখলেন আঙুল থেকে রক্ত পড়ার বদলে গাছের রস বের হচ্ছে।
সন্ন্যাসী অনুভব করলেন যে তিনি এতটাই শুদ্ধ হয়ে উঠেছেন যে তার শরীর রক্ত নয়, গাছের রসে পূর্ণ হয়েছে। এতে তিনি খুব খুশি এবং গর্বিত হলেন। সন্ন্যাসী নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ব্যক্তি মনে করতে শুরু করলেন। ভগবান শিব এই ঘটনা দেখে একজন বৃদ্ধের রূপ ধারণ করে সেখানে পৌঁছালেন। সন্ন্যাসীকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি এত খুশি কেন? সন্ন্যাসী কারণ জানালেন। সব জেনে তাকে বললেন, গাছপালা ও ফলের রস হয়, কিন্তু গাছ-গাছালি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শুধু ছাই থেকে যায়।
বৃদ্ধের রূপ ধারণ করে শিব তৎক্ষণাৎ তার আঙুল কেটে দেখালেন, এবং তা থেকে ছাই বেরিয়ে এল। সন্ন্যাসী বুঝতে পারলেন যে স্বয়ং ভগবান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সন্ন্যাসী তার অজ্ঞতার জন্য ক্ষমা চাইলেন। কথিত আছে যে, তখন থেকেই ভগবান শিব তার শরীরে ছাই লাগানো শুরু করেছিলেন যাতে তার ভক্তরা এই জিনিসটি সর্বদা মনে রাখে। যার মূল কথা- দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে অহংকার করো না, বরং চরম সত্যকে স্মরণ করো।
শিবরাত্রির দিনক্ষণ (Shivratri 2024 Date & Time)
সাধারণত ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে শিবরাত্রির তিথি পড়ে। এই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার পড়েছে মহাশিবরাত্রির তিথি। ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৭/৫৮/৮৬ মিনিট থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৫/৪১/৫৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে শিব চতুর্দশীর তিথি।