বাঙালির উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। মহালয়ার (Mahalaya) আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে (Durga Puja 2022) প্রতিমা দর্শন। কিন্তু তিথি মেনে আজ শনিবার থেকেই শুরু হল মূল পুজো (Durga Puja) আজ দুর্গা-ষষ্ঠী। দেবীর বোধন। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ষষ্ঠীতেই (MahaShashthi) কেন দেবীর বোধন হয়? দেশের বিভিন্ন অংশে নবরাত্রির (Navratri) শুরু বা শুক্লা প্রতিপদেই কেন দেবীকে জাগরিত করা হয় না? জেনে নিন এর পৌরাণিক তাৎপর্য এবং কাহিনি।
ষষ্ঠী তিথিতে মা দুর্গার মুখের আবরণ উন্মোচন করাই এই দিনের প্রধান কাজ হিসাবে গন্য হয়। এছাড়া অন্য নিয়ম হিসেবে বোধনের আগে থাকে কল্পারম্ভ এবং বোধনের পরে আমন্ত্রণ এবং অধিবাস নামে আরও কয়েকটি ছোট নিয়ম পালন করা । মনে করা হয় বোধনের মাধ্যমে প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এই নিয়মের পরেই সকল দেব-দেবী এবং তার সঙ্গে মহিষাসুরের ও পুজো করা হয়।
পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ন হচ্ছে দেবতাদের দিন। উত্তরায়নের অর্থ বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ উত্তরে গমন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। দিনের বেলায় জাগ্রত থাকেন দেবতারা। তাই দিনেই দেবতাদের পূজা করা শাস্ত্রের বিধান। অন্যদিকে সূর্যের দক্ষিণায়ন দেবতাদের রাত। দক্ষিণায়ন অর্থ বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ দক্ষিণে গমন। সূর্যের এই গমনকালের ব্যপ্তিও ছয় মাস। দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতাদের একরাতের সমান। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় দেবতারা ঘুমান। সেই কারণেই রাতে পুজো করার বিধান নেই শাস্ত্রে। শরৎকাল দক্ষিণায়ণের সময়। দেবতাদের রাত্রিকাল। তাই শরৎকাল পূজার্চনার জন্য উপযুক্ত সময় নয় - ‘অকাল।’ অকালে দেবতার পুজো করতে হলে তাঁকে জাগরিত করতে হয়। জাগরনের এই প্রক্রিয়াটিই হল ‘বোধন।’
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন রামচন্দ্র। সেটা ছিল অকালবোধন। রামচন্দ্র দক্ষিণায়নের মধ্যে শরৎকালে দেবীর পুজো করেন। অর্থাৎ অকালে বোধন। কিন্তু শাস্ত্র মতে তিনি তো তখন নিদ্রামগ্ন। তাই পুজো করতে হলে তাঁকে জাগরিত করতে হবে। শরৎকালের এই বোধনই অকালবোধন। রামচন্দ্রের আগে রাজর্ষি সুরথ প্রথম আদ্যাশক্তি মহামায়ার পুজো করেছিলেন। সেই পুজো হয় বসন্তকালে। সেটাই বাসন্তী পুজো নামে প্রচলিত।