ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য একটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। আর এর জন্য সরকারেরও পরিবর্তন দেখেছেন মানুষ। করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে ধনী-গরিবের এই সমস্যা আরও বেড়েছে। এই মাসে এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে এই বৈষম্য অনেকটাই বেশি। ভারত সেই সমস্ত দেশের মধ্যে একটি যেখানে ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেশি। অনেক অর্থনীতিবিদ এটিকে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় বাধা বলে মনে করেন।
জনসংখ্যার ৫০% আয় জাতীয় গড়ের এক-চতুর্থাংশ
প্যারিসের ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাপ এই মাসে World Inequality Report 2022 রিপোর্ট জারি করেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি ২০২১ সালে গড় ১১,৬৫,৫২০ টাকা রোজগার করেছেন। আর যদি ৫০ শতাংশ গরিব জনসংখ্যার দিকে নজর রাখা যায় তবে দেখা যাবে, তাঁদের বার্ষিক গড় আয় ৫৩,৬১০। এমনকী এই ৫০ শতাংশ গরিব মানুষের আয় ২০২১ সালের জাতীয় গড় ২,০৪,২০০-এর চেয়েও কম।
মাত্র ১.২৫ কোটি মানুষ ৬৫ কোটি মানুষের দ্বিগুণ আয় করছেন
রিপোর্টে রয়েছে আরও চমকে যাওয়ার মতো তথ্য। তাতে বলা হয়েছে, দেশের মোট আয়ে শীর্ষ এক শতাংশ মানুষের অংশীদারিত্ব ২২ শতাংশ। আর যদি ১০ শতাংশ ধনীর ব্যক্তির হিসেবে চোখ রাখা হয়, তবে সেই অংশীদারিত্ব বেড়ে হচ্ছে ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৫০ শতাংশ কম আয় সম্পন্ন ব্যক্তির মোট অংশীদারিত্ব মোট ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ শীর্ষ ১.৩ কোটি মানুষ, তলার দিকের ৬৫ কোটি মানুষের মোট আয়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণ রোজগার করছেন।
একবছরে দ্বিগুন হয়েছে গরীব মানুষের সংখ্যা
এর আগে, পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল যে, দৈনিক ১৫০ টাকাও রোজগার করতে পারে না (ক্রয় ক্ষমতার বিচারে), ভারতে এমন লোকের সংখ্যা গত একবছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এমন মানুষের সংখ্যা একবছরেই ৬ কোটি বেড়েছে, যার জেরে মোট গরিবের সংখ্যা বেড়ে ১৩.৪ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। শুধু যে ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথমবার গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তা-ই নয়, ৫৬ বছর পর ভারত ফের গণ দারিদ্র শ্রেণির দেশে পরিণত হয়েছে।
দরিদ্র মানুষের বড় অংশই মধ্যবিত্ত
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এর জেরে মধ্যবিত্তদের এক তৃতীয়াংশ দরিদ্র শ্রেণিতে পৌঁছে গিয়েছে এবং তাদের একটি বড় অংশ শহুরে জনগোষ্ঠী। অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, এমনটা নয় যে অতিমারীর কারণে আর্থিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে, এটা গত ৩ দশক ধরেই চলছে। ৩ দশক ধরেই বড়লোকদের সম্পত্তি বাড়ছে এবং গরিবরা আরও গরিব হয়ে পড়ছেন।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক
সেন্টার ফর ইকোনমিক পলিসি অ্যান্ড পাব্লিক ফাইন্যান্সের অ্যাসোসিয়েট এডিটর অধ্যাপত সুধাংশু কুমার মনে করেন, এই ধরনে বৈষম্য আর্থিক বৃদ্ধির রোধের পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। ভারতের মতো অর্থনীতিতে এই বৈষম্যর চেয়ে আর খারাপ কিছু হতে পারে না। এক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, এমন নীতি গ্রহণ করা উচিত যাতে এই বৈষম্য আর বৃদ্ধি না পায়।
নীতি প্রণয়নের সময় মধ্যবিত্তরা উপেক্ষিত হন
সুধাংশু কুমার জানাচ্ছেন, নীতি প্রণয়নের সময় প্রায়শই মধ্যবিত্তরা উপেক্ষিত হন। করোনাকালে সরকার নীতিগতভাবে মানুষকে সাহায্য করার যে যে প্রচেষ্টা করেছে তাতে মধ্যবিত্তদের অনেকটাই উপেক্ষা করা হয়েছে। যার জেরে মধ্যবিত্তদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ দারিদ্য শ্রেণির মধ্যে চলে গিয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্তরা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্য পর্যন্ত করছেন। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি মনোবিদদের দিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।