অনেকেই আয়কর (Income Tax) বাঁচাতে নানা বিনিয়োগ করে। কিন্তু একাধিক বিনিয়োগের পরেও দেখা যায়, আয়কর বাঁচানো যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় যে ভুলটি বেশিরভাগ মানুষ করেন, তা হল আর্থিক বছরের শেষের দিকে বিনিয়োগ করেন, যার জেরে আয়কর বাঁচে না। যদি আয়কর বাঁচাতে চান,তাহলে প্ল্যানিং করা উচিত আর্থিক বছরের শুরুতেই। সেক্ষেত্রে অনেক টাকা আয়কর আপনি বাঁচাতে পারেন। আপনার বার্ষিক আয় যদি ১০ লক্ষ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে বড় অঙ্কের আয়কর আপনি অনায়াসে বাঁচাতে পারেন। রইল সেই পদ্ধতিগুলি।
সরকার নতুন কর ব্যবস্থার অধীনে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সীমা নির্ধারণ করেছে। যেখানে পুরনো কর ব্যবস্থার অধীনে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনার আয় এই দুটি কর ব্যবস্থার চেয়ে বেশি হয়, তবে আপনাকে কর বাঁচাতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আসুন জেনে নিই কীভাবে ১০ লক্ষ টাকা আয়ের উপর আপনাকে এক টাকাও আয়কর দিতে হবে না।
১০ লক্ষ টাকা আয়ের উপর কত আয়কর ধার্য করা হয়?
১০ লক্ষ টাকার বার্ষিক আয়ের উপর কর বাঁচাতে আপনাকে পুরনো কর ব্যবস্থা বেছে নিতে হবে। পুরনো কর ব্যবস্থার অধীনে বিভিন্ন ট্যাক্স স্ল্যাব পাওয়া যায়। পুরনো কর ব্যবস্থার অধীনে, আয়কর বিধি বলছে, ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের উপর কোনও কর দিতে হবে না। ২.৫-৫ লক্ষ টাকা আয়ের উপর ৫% কর দেওয়ার বিধান রয়েছে। যেখানে ৫-১০ লক্ষ টাকার বার্ষিক আয়ের উপর ২০ শতাংশ ট্যাক্স নেওয়া হয়। ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি বার্ষিক আয়ের উপর ৩০ শতাংশ ট্যাক্স স্ল্যাব রয়েছে।
এক টাকাও ট্যাক্স দিতে হবে না
যদি আপনার বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকা হয়, তবে আপনাকে ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। তবে আপনি চাইলে এক টাকাও দিতে হবে না। কিছু বিনিয়োগ করে এবং করছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করে করের সম্পূর্ণ পরিমাণ থেকেই রেহাই পেতে পারেন।
কীভাবে ১০ লক্ষ টাকা আয়ের উপর ট্যাক্স সংরক্ষণ করতে পারেন?
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন হিসেবে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে এখন ৯.৫০ লক্ষ টাকার উপর ট্যাক্স নেওয়া হবে। PPF, EPF, ELSS, NSC-এর মতো স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করে আপনি আয়করের ধারা 80C-এর অধীনে দেড় লক্ষ টাকার ট্যাক্স বাঁচাতে পারেন। এখন ৮ লক্ষ টাকায় ট্যাক্স দিতে হবে।
আপনি যদি ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমে (NPS) বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনাকে ধারা 80CCD (1B) এর অধীনে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা কর ছাড় দেওয়া হবে। এখন ৫০ হাজার টাকা বেশি বিয়োগ করলে ৭.৫০ লাখ টাকা ট্যাক্স ধার্য হবে।
আপনি যদি একটি হোম লোনও নিয়ে থাকেন তবে আপনি আয়করের ধারা 24B এর অধীনে এর সুদের উপর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারেন। আপনি যদি ৭.৫০ লক্ষ থেকে আরও ২ লক্ষ টাকা বিয়োগ করেন, তাহলে মোট কর আয় হবে ৫.৫০ লক্ষ টাকা।
আপনি আয়করের ধারা 80D এর অধীনে একটি চিকিৎসা নীতি গ্রহণ করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর বাঁচাতে পারেন। এই স্বাস্থ্যবিমাতে আপনার নাম, আপনার স্ত্রী এবং সন্তানদের নাম থাকতে হবে। এছাড়াও, আপনি যদি আপনার পিতামাতার নামে স্বাস্থ্যবিমা কিনে থাকেন তবে আপনি ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ছাড় পেতে পারেন।
এমন পরিস্থিতিতে, আপনি যদি ৫.৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৭৫ হাজার বিয়োগ করেন, তাহলে মোট কর দায় হবে ৪.৭৫ লক্ষ টাকা, যা ৫ লক্ষ টাকার পুরনো কর ব্যবস্থার সীমার নীচে হবে। এর মানে হল ১০ লক্ষ টাকার বার্ষিক আয়ের উপর আপনাকে এক টাকা কর দিতে হবে না।