যেখানেই সন্ধ্যা হয়, সেখানেই পোকার ভয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই বিষাক্ত প্রকার আনাগোণা শুরু হয়েছে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। অনেকেই পোকার হানায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকে হস্টেল ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। পোকার আক্রমণে ব্য়তিব্যস্ত সাধারণ পড়ুয়ারা। মশারি টাঙিয়েও লাভ হচ্ছে না। পোকা মশারির ফুটো দিয়েও ঢুকে পড়ছে বিছানায়, এতটাই ছোট। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে হস্টেলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
কী পোকা এটি? কীভাবে ক্ষতি করে?
রোভ বিটেল নামে একটি পোকা অ্যাসিড পোকা নামে পরিচিত। পোকাটিকে কিং অফ পেন বা ব্যথার রাজা বলা হয়। ৭ থেকে ১০ মিলিমিটার লম্বা কালো-কমলা রঙের পোকাটি কামড়াতে এবং হুল ফোটাতে পারে। সেটির শরীরে পিডেরিন নামে এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ থাকে। যা মানুষের ত্বক ও কোষের ক্ষতি করে। পোকা কামড়ালে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে শরীরের অন্য অংশে সেই অ্যাসিড লাগলে সেখানে ওই ধরনের ফোসকা বা ক্ষত তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এই পোকা কামড়ালে জ্বালা-পোড়া, ব্যথা, বমি ভাব, মাথা ব্যথা এমনকী জ্বর হতে পারে, পোকাটি এতটাই ক্ষতি করে, সেটির সংস্পর্শে যদি কারও চোখে ক্ষতি হয় সেই ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
কোথায় এবং কখন আত্ক্রমণ করে এই পোকা?
এই পোকাটি মূলত বর্ষাকালেই বেশি দেখা যায়। জলা জমি, জলা এলাকা, ডোবা, ধানক্ষেত এ সমস্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়। পোকাটি ঘরের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে ঘরের দিকে ছুটে আসে। সে কারণে জনবহুল এলাকায় বাড়িতে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। কীটনাশক ছড়িয়ে এই পোকাটি মারা যায় না। এই পোকা মারতে হলে আগুনে পুড়িয়ে বা অক্সিজেন নষ্ট করে মেরে ফেলতে হবে। যেটা বাস্তবে খুবই কঠিন। ফলে মুষড়ে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা।
কীভাবে আটকাবেন পোকা?
তাই পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, সেই সঙ্গে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করে আগাছা উপড়ে ফেলাটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। প্রয়োজনে ঘরে সাদার পরিবর্তে হলুদ আলো ব্যবহার করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। খুব প্রয়োজন না হলে আলো নিভিয়ে রাখাই ভালো বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
পোকার আতঙ্কে হোস্টেল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনেকে
সন্ধ্যার পর যেহেতু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারটি সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যায়, সে কারণে পোকার আক্রমণের চিকিৎসা করতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরের দিন পর্যন্ত। ততক্ষণে পোকার হানায় গায়ে ফোসকার মতো পড়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণাও শুরু হয়েছে। অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কী করতে হবে তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। ইতিমধ্যেই অনেকে পোকার আতঙ্কে হোস্টেল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
মেডিক্যাল ক্যাম্প করবে টিএমসিপি
রবিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হোস্টেলে গিয়ে আবাসিকদের ওষুধপত্র দেওয়া হয়। সংগঠনে দার্জিলিং জেলার কার্যনির্বাহী সভাপতি মিঠুন বৈশ্য জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য মঙ্গলবার থেকে স্পেশাল মেডিক্যাল ক্যাম্প করার কথা ভাবা হচ্ছে সংগঠনের তরফ থেকে।