সারা দেশে মেট্রো পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রীধরণ। ভারতীয় রেলের বিখ্যাত অনেক প্রকল্পই তৈরি হয়েছে তাঁর হাত ধরে। দিল্লি মেট্রোও তৈরি হয়েছে তাঁর পরিকল্পনায়। সেই ‘মেট্রো ম্যান’ ই শ্রীধরণকে দিয়েই এবার কেরালা জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। ৮৮ বছর বয়সী ভারতের মেট্রো ম্যান ই শ্রীধরণ সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। আর দলে যোগ দিয়েই এবার দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (ডিএমআরসি) প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করলেন শ্রীধরণ। ২০১২ সাল থেকে এই পদে ছিলেন তিনি।
বাংলার মত কেরলেও বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। আর ভোটের এই গরম হাওয়ার মাঝেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শ্রীধরণ। এমন জল্পনাও শোনা যাচ্ছে যে তাঁকেই কেরালায় মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করবে গেরুয়া শিবির। দিল্লি মেট্রোর উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিল। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার কারণেই এখন পেশাগত কাজ দূরত্ব বাড়াচ্ছে শ্রীধরণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ডিএমআরসির দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, 'ই শ্রীধরণ তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যা মেনে নেওয়া হয়েছে। ই শ্রীধরণ ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিএমআরসি-র প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছিলেন।' ৮৮ বছরের শ্রীধরণ ১৯৫৪ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে ভারতীয় রেলে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তাঁকে কলকাতা মেট্রোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর পরে তিনি কোঙ্কন রেলওয়ের কাজ শেষ করেন।
১৯৯৫ সালে যখন দিল্লি মেট্রোর স্বপ্ন দেখা শুরু হয়, তখন তার প্রধান রূপকার ছিলেন শ্রীধরণই । দিল্লি মেট্রো ছাড়াও, ই শ্রীধরণ আজ দেশে যে সমস্ত মেট্রো চলছে বা নির্মিত হচ্ছে তাতে নিজের অবদান রেখেছেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, প্রথম খবর আসে যে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হয়েছে। তবে পরে তা অস্বীকার করা হয়। তবে তিনি কেরল থেকে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন এবং বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থঈ হচ্ছেন সেই জল্পনা চলছেই। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের থেকে তাঁর পদ্যাগ সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পদ্মবিভূষণ প্রাপক ই শ্রীধরণ ২০১১ সালে দিল্লি মেট্রোর প্রধান হিসেবে অবসর নেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে তিনি ছিলেন। শ্রীধরণ আগেই জানিয়েছেন, ‘‘আমি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাছাকাছি থেকেছি। অবসরের পর থেকে একাধিক সরকার আমি সামনে থেকে দেখেছি। কিন্তু যে পথে রাজনৈতিক লড়াই করা উচিত, সে পথে হয় না। শেষ ১০ বছর ধরে আমি কেরলে আছি। সরকারের সাধারণ মানুষের জন্য যা করা উচিত, তা করা হচ্ছে না। আমি বিজেপিতে যোগ দিয়ে আমার অভিজ্ঞতার অংশটুকু ভাগ করে নিতে চাই।" কোচি মেট্রোর অন্যতম স্থপতি শ্রীধরণ। তিনি বলেছেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে আমি বিশ্বাসী নই। তবে আমার বার্তা ভোটার পর্যন্ত পৌঁছে দেব।‘
বর্তমানে মালাপ্পুরমে অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার সক্রিয় রাজনীতিতে আসলেন তিনি। গত দশ বছর ধরে কেরলে তিনি আছেন ও পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষের জেরেই বিজেপিতে গেলেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি হতভম্ব কংগ্রেস ও সিপিআইএম। ভোটের রাজনীতিতে ৮৮ বছরের শ্রীধরণ সাফল্য পান কিনা, সেটা পরের কথা কিন্তু মেট্রো ম্যান দলে আসায় কেরলে বিজেপির প্রচারে যে গতি বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু এ সবের মধ্যে থেকেও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে, যে নির্বাচনে লড়াই নিয়ে বিজেপির দলীয় অবস্থান কী এবার পাল্টে যাবে শ্রীধরণের জন্য। কারণ, ৭৫ বছরের বেশি বয়সের কাউকেই নির্বাচনের লড়াইয়ে নামতে দিতে চায় না গেরুয়া শিবির। সেই কারণেই আড়ালে চলে গিয়েছেন এলকে আদবানি, মুরলী মনোহর জোশীরা। সেই নিয়ম ভেঙে শ্রীধরণকে ভোটে দাঁড় করানো হবে কি না, সেটার জবাব আর কিছু দিনের মধ্যেই মিলবে। এদিকে দলের তরফে ই শ্রীধরণই যে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে সেরা ব্যক্তি তা বলে নতুন করে জল্পনা উস্কে দিয়েছেন কেরল বিজেপির প্রধান কে সুরেন্দ্ররণ।