কৃষ্ণনগরের মানুষ তাঁকে রানি মা বা রাজমাতা বলে ডাকেন। সেই অমৃতা রায়-কে এবার তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অমৃতা রায় কঠিন প্রতিপক্ষ হতে চলেছেন মহুয়ার। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের সদস্য সৌমিশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী অমৃতা রায়। রাজনীতিতে নবাগতা হলেও রাজপরিবারের গৃহবধূ হওয়ার সূত্রে কৃষ্ণনগরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। সেই কারণেই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।
অমৃতা রায়ের জন্ম ১৯৬১ সালে। তিনি রাজা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ৩৯ তম কুলবধূ। তাঁর লেখাপড়া কলকাতায়। কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুলে। পরে রানি বিড়লা কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। ইন্টিরিয়র ডেকোরেশনে তিনি বিশেষ পারদর্শী। ক্রিয়েটিভ ডিজাইন নিউ এক সময় কনসালটেন্ট করতেন। অমৃতা রায়ের স্বামী এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকরি করতেন। তাঁদের সন্তান মনীশ চন্দ্র রায় পেশায় আইনজীবী।
এমনিতেই কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য রয়েছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভারতের ইতিহাসের একজন নামকরা ব্যক্তিত্ব। ১৮ শতকের একজন গুণী প্রশাসক ছিলেন। তাঁর জ্ঞান ও দূরদর্শীতা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তাঁর ৫৫ বছরের শাসনকাল বাঙালি সংস্কৃতির গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে ধরে।
'কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি' নদিয়া জেলা তথা বাংলার এক অন্যতম স্থাপত্য। একসময় 'নদিয়ার মহারাজাদের' রাজকীয় বাসভবন ছিল। যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়নি। দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ আজও সেই রাজবাড়ি দেখতে আসেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অমৃতা রায় মহুয়া মৈত্রর কঠিন প্রতিপক্ষ হতে চলেছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলা নেতৃত্বই প্রথম অমৃতা রায়কে প্রার্থী করার আবেদন করে। তারপর পার্টির তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অমৃতা রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয় গেরুয়া শিবিরের। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জিতেছিলেন মহুয়া মৈত্র। ৬,১৪,৮৭২ ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে বিজেপির কল্যাণ চৌবে পান ৫,৫১,৬৫৪ ভোট। সেই নির্বাচনে মহুয়া মৈত্রের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিল পলাশিপাড়া এবং কালীগঞ্জ বিধানসভা।
যদিও গত পাঁচ বছরে কালীগঞ্জ বিধানসভায় বিজেপি নিজেদের সংগঠন মজবুত করেছে। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধেও সংসদে অভিযোগ উঠেছে। এবারের ভোটে তার অ্যাডভান্টেজ নিতে চাইবে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতৃত্বের আশা, অমৃতা রায় একজন স্থানীয় মুখ। তিনি বেশ পরিচিতও। মহুয়াকে টক্কর দেওয়ার জন্য তিনিই সব থেকে যোগ্য।
তথ্য সহযোগিতা : ঋত্বিক মণ্ডল