রাজনীতি-কে সম্ভাবনার শিল্প বলা হয়। তা ফের প্রমাণিত হল লোকসভা ভোটের ফলাফলে। এবারের ভোটে কোনও একটি দলও এককভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। NDA ২৯২ আসন পেয়েছে ঠিকই তবে বসে নেই INDIA শিবিরও। তাঁরাও হয়তো সরকার গঠনের চেষ্টা করবে। সেই জল্পনা উসকে দিয়েছেন খোদ শরদ পাওয়ার। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রে সম্ভাবনা জিইয়ে রাখবেন। ফলে সরকার যে কেউ গড়তে পারে, এই আলোচনায় সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া।
কারা সরকার গড়বে তা অনেকটাই নির্ভর করছে নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর উপর। তাঁরা এনডিএ-র শরিক। কিন্তু অতীতে তাঁদেরও জোট বদল করতে দেখা গিয়েছে। সুতরাং তাঁরা যে NDA ছেড়ে ইন্ডিয়াতে আসবেন না এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাঁরা যে কোনও মূহূর্তে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেই ক্ষমতা তাঁদের রয়েছে। কারণ চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টির হাতে রয়েছে ১৬ টি আসন। আর নীতীশের জেডিইউ-র কাছে ১২টি। যোগ করলে ২৮ টি।
অঙ্কের হিসাবটা এবার দেখুন। এনডিএ-র কাছে ২৯২ আসন রয়েছে এই মুহূর্তে। যদি নীতীশ ও চন্দ্রবাবু জোট থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে এনডিএ-র কাছে থাকবে ২৬৪। ম্য়াজিক ফিগার ২৭২। সুতরাং সেই ম্যাজিক ফিগার তারা স্পর্শ করতে পারবে না।
আবার দেখুন NDA-র আরও যারা জোট শরিক রয়েছে তাদের মধ্যে LJP-র কাছে রয়েছে ৫ আসনে, JDS ২, RLD ২টি, শিন্ডের শিবসেনা ৭টি আসন পেয়েছে। ফলে এই দলগুলোর উপরও কিন্তু বিজেপি-কে তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাবে তেলুগু দেশম পার্টি এবং জেডিইউ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ইন্ডিয়া গ্রুপের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ ছাড়বে না নীতীশ বা চন্দ্রবাবু। এমন উদাহরণ অতীতেও রয়েছে। ২০০৪ সালে NDA-র অনেক সহকর্মী ইউপিএ-তে চলে গিয়েছিল।
আর একটা প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। তা হল অখিলেশ এবং মমতা কি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দাবি করতে পারেন? উত্তর রাস্তা কিন্তু খোলা। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ৩৭ টি আর পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯টি আসন পেয়েছেন। সুতরাং ইউপিএ-র অখিলেশ যাদব দ্বিতীয় শক্তিশালী নেতা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তৃতীয় শক্তিশালী দল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অখিলেশ যাদব এবং মমতাও নিজেদের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার ঘোষণা করতে পারেন। কারণ, তাঁদের হাতে সেই সংখ্যক সিট রয়েছে। যদি ইন্ডিয়া সরকার গড়তে চায় তাহলে অখিলেশ ও মমতার দিকে তাকিয়ে থাকতেই হবে রাহুল গান্ধীদের। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে দর কষাকষি চলবে। যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে অনেকগুলো আসন রয়েছে তাই তিনিও কিন্তু দাবি দাবিদার হতে পারেন।
আবার NDA-তে যে কেউ উদ্ধব ঠাকরের মতো ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হতে পারে। কারণ রাজনীতি অসীম সম্ভাবনার লড়াই। ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করে জয়ী হওয়ার পরে, এনডিএ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আবারও যদি একই রকম কিছু হয়? শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। একইভাবে,NDA ও INDIA জোটের যে কোনও দলই কেন্দ্রে নিজেদের দাবি নিয়ে অনড় থাকতে পারেন।