বিরোধীদের INDIA জোটের কফিনে শেষ পেরেকটি কি মালদাতেই পোঁতা হয়ে গেল? যে মালদায় আজ অর্থাত্ বুধবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা', সেখানেই তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বলে দিলেন, লোকসভা ভোটে বাংলায় একাই লড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। এখানেই শেষ নয়, কংগ্রেসকে যে তিনি লোকসভা ভোটে অন্যতম বিরোধী দল হিসেবেই বাংলায় দেখছেন, তাও স্পষ্ট করে দিলেন। বিজেপি, সিপিআইএম-এর সঙ্গে বিঁধলেন কংগ্রেসকেও। আরও একধাপ এগিয়ে ঘোষণা করে দিলেন, লোকসভায় কংগ্রেসকে একটি আসনও ছাড়বে না তৃণমূল কংগ্রেস।
'তোমাকে আমি কিছুই দেবো না'
লোকসভা ভোটে যে কংগ্রেসকে একটি আসনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। মমতার কথায়, 'তোমাদের একটাও এমএলএ নেই। মালদায় দুটো আসন তোমাদের দিচ্ছি। আমরা জিতিয়ে দেব। না, আমাদের অনেক চাই। আমি বললাম, তোমাকে আমি একটাও দেবো না। তুমি আগে সিপিএম-এর সঙ্গে ছাড়ো। সিপিএম তোমার নেতা। সিপিএম আমাদের কী রকম অত্যাচার করেছে, মনে আছে তো?'
'ভোট আসলেই কোকিলের মতো কুহু কুহু করে ডাক দিতে শুরু করে'
আজ মালদায় মমতা ফের জানিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের 'একলা চলো' নীতিতেই এগোবে। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা-র নাম না করে মমতার কথায়, 'অনেক দল আছে, ভোট আসলেই কোকিলের মতো কুহু কুহু করে ডাক দিতে শুরু করে। দেওয়ার বেলায় নেই, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য আছে। বিজেপি-কে ভারতে কেউ যদি পরাস্ত করতে পারে, সেটা তৃণমূল কংগ্রেসই পারে।'
'বিজেপি-কে আমরাই রাজনৈতিক ভাবে টাইট করতে পারব'
এরপরেই সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বরকত গনিখান চৌধুরীর পরিবারের নাম করে মমতা বলেন, 'পরপর দুটো সিটে কংগ্রেস জিতেছে। বারবার জিতেছে। আপনাদের জন্য কী করেছে? বরকতদার পরিবার থেকে যে কেউ ভোটে দাঁড়াতে পারেন, আমি তা নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু ওরা সিপিএম-এর সঙ্গে লড়বে। বিজেপি-র হাত শক্ত করার জন্য। মনে রাখবেন, বিজেপি-কে আমরাই রাজনৈতিক ভাবে টাইট করতে পারব। ওরা পারবে না।' মমতা যখন এই কথাগুলি বলছেন, তখন মঞ্চে ছিলেন বরকত গনিখান চৌধুরীর পরিবারের সদস্যা তথা তৃণমূল সাংসদ মৌসুম বেনজির নুর।
ইন্ডিয়া জোটের কফিনে শেষ পেরেক?
INDIA জোট নিয়ে যে কংগ্রেসের আচরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ, তা আগেই জানিয়েছেন। কিছু দিন আগেই মমতা অভিযোগ করেন, ইন্ডিয়া জোটের মিটিংয়ে তাঁকে অপমান করা হয়। শুধুই সিপিআইএম-এর কথা শোনা হয়। বলেছিলেন, 'আমি বলেছিলাম, যে রাজ্যে, যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তারা সেই রাজ্যে লড়ুক। আর আপনারা ৩০০ আসনে একা লড়াই করুন। আমরা সাহায্য করব। তারা বলছে, তাদের মর্জিমতো হবে।'
যদিও রাহুল গান্ধী বন্ধুত্বের বার্তাই দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, 'আমাদের যে আসন বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে, তা চলছে। তার ফলাফল আসবে। ওই বিষয়ে আমি এখানে কোনও মন্তব্য করব না। মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ও দলের সম্পর্ক খুবই ভাল। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রকম হয়। আমাদের কেউ কিছু বলে দেন। ওঁদের কেউ কিছু বলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সব এতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।' এরপরেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে মমতা ঘোষণা করে দেন, পশ্চিমবঙ্গে একক ভাবেই লোকসভা ভোটে লড়বে তৃণমূল কংগ্রেস।
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন, তাতে রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, বিরোধীদের জোট একেবারেই ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছে। যদিও কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানভঞ্জন ও ইন্ডিয়া জোটকে ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।