ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র : পশ্চিম মেদিনীপুরের দুটি লোকসভা আসনের মধ্যে একটা হল ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র। ২০০৮ সালে পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্র অবলুপ্ত করে নতুন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয়। পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোট শুরু হয় ১৯৫২ সালে। প্রথম সাংসদ ছিলেন নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্র কখনও বামেদের আবার কখনও কংগ্রেসের দখলে ছিল। তবে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। তখন থেকে এই কেন্দ্রের সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। সেই বছর প্রাক্তন নকশাল নেতা সন্তোষ রানাকে পরাজিত করেন দেব। সন্তোষ রানা সেবার সিপিআইএম-এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী ৫১% পুরুষ এবং ৪৯ শতাংশ মহিলা ছিলেন। এই আসনের অন্তর্গত মোট ৭ বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হল, পাঁশকুড়া, পশ্চিম সবং, পিংলা, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটাল এবং কেশপুর। এই সাত আসনের মধ্যে ৬ আসনেই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে ঘাটাল বিধানসভা আসনটি ২০২১ বিধানসভায় দখল করে বিজেপি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রায় অস্তিত্ব ছিল না। মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন সেবারের প্রার্থী মতিলাল খাটুয়া। তবে ২০১৪ সালের পরে সেখানে বিজেপি আস্তে আস্তে ভোট বাড়াতে শুরু করে। সেবার প্রায় ৬ শতাংশ ভোট পায় গেরুয়া প্রার্থী। কিন্তু সব সমীকরণ উল্টে ২০১৯ সাল থেকে সেখানে ব্যাপক ভোট বাড়ায় তারা। সেবার তৃণমূলের দেবের বিরুদ্ধে দাঁড়ান ভারতী ঘোষ। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট কাটেন তিনি। দেব ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতে যান। তবে সেখানে সংগঠন মজবুত করতে শুরু করে পদ্ম শিবির।
২০০৯ সালে অবশ্য এই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন সিপিআইয়ের হেভিওয়েট নেতা গুরুদাস দাসগুপ্ত। তিনি প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে তৃণমূলের নূরে আলম চৌধুরীকে পরাস্ত করেছিলেন। তৃতীয় স্থানে বিজেপির মতিলাল খাটুয়া মাত্র ২.২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
২০১৪ সালে একদা নকশাল নেতা তথা সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রানাকে ২ লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত করে প্রথমবার তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন দেব। ২০১৪ সালের মতো ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ফের বিজয়ী হন দেব। তিনি সেবার গতবারের তুলনায় ২ শতাংশ কম ভোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। গেরুয়া প্রার্থী ভারতী ঘোষ ভোট পেয়েছিলেন ৬,০৯,৯৮৬। অন্যদিকে, দেব পেয়েছিলেন ৭,১৭,৯৫৯ ভোট।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের এবারের সবথেকে বড় ইস্যু হল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। প্রতিবছর বন্যায় ভেসে যায় ঘাটালের মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এই মাস্টার প্ল্যান হলে তারা বন্যা থেকে মুক্তি পাবে। তবে ৬০ বছর ধরে এই প্ল্যান এখনও কার্যকর হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তিনি এই মাস্টার প্ল্যানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবেন।
বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় যদিও দীপক অধীকারী (দেব)-এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িত দেব। তা নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন দেব। তবে বিজেপি আবার সেখানে সংগঠনও বাড়িয়েছে। তাই শেষ হাসি কে হাসবে সেটাই দেখার।