West Bengal Lok Sabha Elections 2024: মালদায় (Maldah) গনিখান চৌধুরীর (ABA Gani khan chowdhury) যে জনপ্রিয়তাকে বহু বছর ধরে রাজনীতির ময়দানে কাজে লাগিয়ে আসছে কংগ্রেস, সেই ঐতিহ্য এবার ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে? প্রশ্নটা উঠছে, যখন দেখা যাচ্ছে লোকসভা নির্বাচনে বাংলার রাজনীতিতে গনিখান পরিবারের প্রভাব কমছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও গনিখান পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সে বার মালদা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোস্তাক আলম জেলায় পা রেখেই প্রথমে গনি খানের মাজারেই দোয়া করেছিলেন। তারপর বলেছিলেন, 'ডালুবাবু আমাদের অভিভাবক।'
মালদায় গনি-মিথ ফিকে হচ্ছে?
এরপর মহানন্দা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। মৌসম বেনজির নূর ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। সে বারই মালদা উত্তর আসনে লোকসভার টিকিট পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মুর কাছে ৮৪,২৮৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। কংগ্রেস ছেড়ে যখন তৃণমূলে যোগ দিলেন মৌসম, রাহুল গান্ধী তখন কংগ্রেসের সভাপতি। মালদায় জনসভায় বলেছিলেন, 'গদ্দার।' সে বছর বরকত গনিখান চৌধুরীর ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুবাবু কংগ্রেসের টিকিট পেয়েছিলেন। যদিও মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে কংগ্রেসের পর পর তিনবারের সাংসদ ডালুবাবু বরাবরই বামেদের সঙ্গে জোটের বিরোধী। অতীতে একাধিকবার একথা তিনি মিডিয়াতেও বলেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, জোট হোক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে।
গনিখান চৌধুরীর পরিবারের একজনই টিকিট পেলেন
২০২৪ সালের নির্বাচনে দেখা গেল, টিকিট পাননি ডালুবাবু। তৃণমূল কংগ্রেসও টিকিট দেয়নি মৌসম বেনজির নূরকে। গনিখান পরিবারের একমাত্র সদস্যই টিকিট পেয়েছেন, তিনি ইশা খান চৌধুরী। মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী। মালদহের 'রূপকার' গনি খানের মৃত্যুর পরেও গনি-মিথ-এর উপরে ভরসা করে কংগ্রেস সাংগঠনিক শক্তি ধরে রেখেছিল। কিন্তু এক দশক ধরে জেলায় ধীরে ধীরে তাদের সংগঠন দুর্বল হতে শুরু করেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে গনির 'খাসতালুক' বলে পরিচিত সুজাপুর বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী লক্ষাধিক ভোটে হেরে যান। অন্যদিকে গত লোকসভায় মালদা উত্তর কেন্দ্রেও হেরে গিয়েছেন মৌসম বেনজির নূর। প্রশ্ন উঠছে, গনি-মিথ কি এখনও আছে মালদায়?
টিকিট না পেয়ে অভিমানী মৌসম
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। কিন্তু লোকসভায় এবারে তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। প্রকাশ্যে অভিমান জানিয়েছেন মৌসম। তাঁর কথায়, 'আমি উত্তর মালদহের দু’বারের সাংসদ ছিলাম, জেলা সভানেত্রীও ছিলাম। অবশ্যই আমার প্রত্যাশা ছিল। এর কারণ হল, গত বার আমি বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছিলাম। একই পরিবার থেকে আমরা দু’জনে দাঁড়িয়েছিলাম, তাই ভোটটা ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিল। এ বার টিকিট পেলে জিতব বলে আমার ধারণা ছিল। একটা প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল বিজেপিকে হারানোর জন্য। যাই হোক, আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে প্রার্থী হবেন। সেই সিদ্ধান্তকে দলের একজন সৈনিক হিসাবে আমি স্বাগত জানাই। নিজের প্রত্যাশা থাকলেও দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাকে মেনেছি। সেটা মেনেই চলব। আমি অসুস্থ ছিলাম। ভাইরাল ফিভার হয়েছিল। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তাই কলকাতায় ছিলাম। একটা কাজে দিল্লিতেও যেতে হয়েছিল। এখন মালদহে ফিরে এসেছি। আমাদের প্রার্থীর জন্য, দলের জন্য অবশ্যই আমি নামব। আমি আশা করি, এ বার দুটো আসনই তৃণমূল পাবে।'
মালদায় গনিখানের কীর্তি
১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রেলের দু’বার মন্ত্রী হয়েছিলেন মালদার সাংসদ আবু বরকত আতাউর গনিখান চৌধুরী। কলকাতায় মেট্রো চালু করার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা ছিল। জেলার যাত্রীদের সুবিধের জন্য গৌড় এক্সপ্রেস চালু করেছিলেন তিনি। সেই সময় কলকাতা যাওয়ার দিনের কোনও ট্রেন ছিল না। যাত্রীদের সুবিধার্থে তিনি চালু করেছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া মালদা-আদিনা প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করেছিলেন। নতুন ট্রেনের পাশাপাশি গনিখান রেলমন্ত্রী থাকার সময় মালদহে রেলের ডিভিশন অফিস খোলা হয়েছে। ফলে মালদা সহ মুর্শিদাবাদের কাজও এই ডিভিশনে হয়। শুধু তাই নয় মালদায় গড়েছিলেন ডিজেল শেড। যার জন্য হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। রেলের ইন্ডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম গড়েছিলেন। মালদায় কোচ তৈরির কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগও হয়েছিল।