Advertisement

Kolkata Uttar Constituency: সুদীপ VS তাপস VS প্রদীপ, কলকাতা উত্তরে লড়াই 'তিন কংগ্রেসী'র

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ২টি আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি কলকাতা উত্তর, অন্যটি কলকাতা দক্ষিণ। এই দুই আসনের মধ্যে উত্তর কলকাতায় জোর লড়াইয়ের আভাস মিলছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে চূড়ান্ত লড়াই হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ২০১৯ সালের সাধরণ নির্বাচনে ১,২৭,০৯৫ ভোটে জয়লাভ করেন, পান ৪,৭৪,৮৯১ ভোট। সুদীপ বন্দোপাধ্যায় হারান বিজেপির রাহুল সিনহাকে। বিজেপি পেয়েছিল ৩,৪৭,৭৯৬ ভোট।

'উত্তর কলকাতার' সমীকরণ কী বলছে?
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 05 Apr 2024,
  • अपडेटेड 12:43 PM IST

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ২টি আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি কলকাতা উত্তর, অন্যটি কলকাতা দক্ষিণ। এই দুই আসনের মধ্যে উত্তর কলকাতায় জোর লড়াইয়ের আভাস মিলছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে চূড়ান্ত লড়াই হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ২০১৯ সালের সাধরণ নির্বাচনে ১,২৭,০৯৫ ভোটে জয়লাভ করেন, পান ৪,৭৪,৮৯১ ভোট। সুদীপ বন্দোপাধ্যায় হারান বিজেপির রাহুল সিনহাকে। বিজেপি পেয়েছিল ৩,৪৭,৭৯৬ ভোট। 

এবারে প্রার্থী কারা?
কলকাতা উত্তর কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই কেন্দ্রে ২০১৯ সালে ভোটদানের হার ছিল ৬৫.৭৪% ।  ২০২৪ সালের প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সুদীপ বন্দোপাধ্যায় , ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে তাপস রায় এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল কংগ্রেস থেকে প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উল্লেখ্য, এই তিন দলের প্রার্থীই একসময় কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি করেছেন। তবে সুদীপ এখন তৃণমূলে ও তাপস রায় বিজেপিতে গেলেও প্রদীপ  ভট্টাচার্য এখনও কংগ্রেসেই আছেন

উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের পরিচিতি
কলকাতা উত্তরের মোট ভোটদাতার সংখ্যা ১৪,৪৪,০৮২।  এরআগে ২০১৯ সালে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৯,৫০,৬১৩। গতবার মোট ৬৫.৮৩% শতাংশ ভোট গৃহিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্র থেকে প্রথম বার লোকসভা ভোটে জয়ী হন তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিন বার এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালেই এই আসনে বামেদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। ২০০৯-এর আসন পুনর্বিন্যাসে সৃষ্ট এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, কাশীপুর-বেলগাছিয়া। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৭টি বিধানসভাতেই  তৃণমূল জয়ী হয়েছিল।

নজরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস রায়
কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে এবার লড়াই যে জোর হবে তার আভাস প্রথম থেকেই মিলেছে।  ২০০৯ থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় এখানকার সাংসদ। চারবারের বিধায়কও তিনি। তবে দলের অন্দরেই তাঁকে নিয়ে ক্ষোভের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠে আসে। এমনকী তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও সুদীপের এ আসন থেকে লড়াইয়ের বিরোধিতা করে বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন। দলেই যদি এমন লড়াই থাকে, স্বভাবতই তা বিরোধীদের বাড়তি অক্সিজেন জোগায়। বিজেপি মরিয়া এ আসন পেতে। বাকি দলগুলিও ঝাঁপাচ্ছে। এবার বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল থেকে গেরুয়া শিবির আসা তাপস রায়কে। ফলে দুই প্রাক্তনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবার সকলের নজরে রয়েছে।

Advertisement

৭ বিধানসভায় তৃণমূলের দখলে
কলকাতা উত্তর  লোকসভা  কেন্দ্র যেন কলকাতার 'প্রাণকেন্দ্র'। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি—সহ বিভিন্ন দলের রাজ্য দফতর অবস্থিত এই কলকাতা উত্তরে। শিয়ালদহ, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলার মতো শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রও এই লোকসভা এলাকার মধ্যেই। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যেমন এ কেন্দ্রের মধ্যে, তেমনই আরজিকর, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বেলেঘাটা আইডির মতো দেশজোড়া খ্যাত হাসপাতালও এখানেই। এখানেই মানিকতলা ইএসআই, শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতাল। হাতিবাগান থেকে আহিরিটোলা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, বেথুন কলেজ, স্কটিশ চার্চ— আরও কত নাম জড়িয়ে এ কেন্দ্রের সঙ্গে।  উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে চৌরঙ্গী, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র। পরেশ পাল, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজা, অতীন ঘোষদের মতো শাসকদলের প্রথম সারির নেতারা এখানকার বিধায়ক। এখানে ৭ বিধানসভাতেই তৃণমূল সাতে সাত। 

গত লোকসভাগুলির ইতিহাস
 ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হন মহম্মদ সেলিম। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লড়েন তৃণমূলের টিকিটে। ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৪৬ ভোটে জেতেন সুদীপ। সেলিম পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৬৮টি ভোট। সে বছর বিজেপির মুখ ছিলেন তথাগত রায়। মাত্র ৩৭ হাজার ৪৪টি ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে সেকেন্ড হয় বিজেপি। তৃণমূল ২০১৪ সালে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ে ভরসা রাখলেও বিজেপি প্রার্থী করে রাহুল সিনহাকে। সুদীপ জেতেন ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৮৭ ভোটে। রাহুল পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬১টি ভোট। সিপিএমের রূপা বাগচীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫৩। তবে ২০১৪ সালে এ কেন্দ্রে কংগ্রেস, আপ, বিএসপি-ও প্রার্থী দেয়। এছাড়া নির্দলও ছিল প্রচুর।  ২০১৯ সালেও তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী অপরিবর্তিত রাখে। একদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে রাহুল সিনহা। সিপিএম প্রার্থী করেছিল কণীনিকা বোস ঘোষকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৯১। রাহুল সিনহা পান ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯৬। সিপিএমে পেয়েছিল ৭১ হাজার ৮০টি ভোট। নোটায় ভোট পড়ে ৬ হাজার ৭৩৬টি। তৃণমূল তৃতীয়বারের জন্য দখলে রাখে এই আসন। তবে এবার লড়াই আরও জমাটি।

অনেকের মতে, বিজেপি তাপস রায়কে উত্তর কলকাতায় প্রার্থী করায় অনেক দিন পর কঠিন লড়াইয়ের মুখে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিন লোকসভা ভোটে উত্তর কলকাতায় জিততে তেমন বেগ পেতে হয়নি সুদীপকে। একে বামেদের ভোট ক্ষয়িষ্ণু। তার উপর বিজেপির কোনও সাংগঠনিক তাকত ছিল না উত্তরে। কিন্তু তাপস রায় প্রায় পাঁচ দশক ধরে উত্তর কলকাতাতেই রাজনীতি করছেন। পুরসভার কাউন্সিলর হয়েছেন। বিদ্যাসাগর ও বড় বাজার বিধানসভা থেকে বিধায়ক ছিলেন। উত্তর কলকাতা তাঁর হাতের তালুর মতই চেনা। তা ছাড়া সজল ঘোষ সহ উত্তর কলকাতায় বিজেপির তরুণ ব্রিগেড রয়েছে তাঁর সঙ্গে। শুধু তা নয়, সুদীপের বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে অংশ অসন্তুষ্ট, তাঁদের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রেখে চলছেন তাপস। তাই এবার বিজেপি খেলা ঘোরাতে চাইবেই। তৃণমূলও চাইবে ধারা অব্যাহত রাখতে।

Advertisement

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement