রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র তমলুক। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক গুরুত্ব পেয়ে আসছে। শিক্ষা-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান এই এলাকা। আবার, রাজনীতির আঙিনাতেও তমলুক কেন্দ্রের যথেষ্ট ওজন রয়েছে। এবছর লোকসভা নির্বাচনেও হেভিওয়েট কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে তমলুক।
শুরু থেকে তমলুক ছিল কংগ্রেসের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায একসময় কংগ্রেসের দাপট ছিল। পরে তমলুকে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বামেদের হাতে। ২০০৯ সালে বাম জমানায় বড়সড় পরিবর্তন ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তমলুকের। সে বছর লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার ওই কেন্দ্রে ফোটে জোড়াফুল। সাংসদ হন শুভেন্দু অধিকারী। শুরু হয় অধিকারী পরিবারের জমানা। তবে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই তমলুকের আকাশে বাতাসে আরও এক বদলের হাওয়া বইছে। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম 'প্রেস্টিজ ফাইট' হতে চলেছে তমলুকে। এবার এই কেন্দ্র দখলে মরিয়া পদ্মশিবির। অন্য দিকে, অধিকারী পরিবারকে ছাড়া প্রথমবার সেখানে লোকসভার লড়াইয়ে শামিল ঘাসফুল শিবির। শুভেন্দুদের রুখে সেখানে জোড়াফুল ফোটানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বাংলার শাসকদল। আবার, এই দুই প্রধান দলের লড়াইয়ের মাঝে জিৎ ছিনিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে বামেরাও। সবমিলিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সাক্ষী হতে চলেছে তমলুক।
তমলুক কেন্দ্রের ভোটের ফল (১৯৫১-২০১৯):
১৯৫১-১৯৬২: সতীশচন্দ্র সামন্ত (কংগ্রেস)।
১৯৬৭-১৯৭১: সতীশচন্দ্র সামন্ত (বাংলা কংগ্রেস)।
১৯৭৭: সুশীল কুমার ধাড়া (ভারতীয় লোক দল)।
১৯৮০-৯১: সত্যগোপাল মিশ্র (সিপিআইএম)।
১৯৯৬: জয়ন্ত ভট্টাচার্য (কংগ্রেস)।
১৯৯৮-২০০৪: লক্ষ্মণ শেঠ (সিপিআইএম)।
২০০৯: শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল)।
২০১৪: শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল)।
২০১৬ (উপনির্বাচন): দিব্যেন্দু অধিকারী (তৃণমূল)।
২০১৯: দিব্যেন্দু অধিকারী (তৃণমূল)।
২০২৪: ?
তমলুকে এবার কি পালাবদল?
তমলুকে এবার কী হবে? এই নিয়ে জোর আলোচনা চলছে সর্বত্র। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাড়তি নজর রয়েছে তমলুকে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের ওই এলাকায় রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারীদের হাতের মুঠোয়। শুভেন্দু বর্তমানে বিজেপিতে। তাঁর দুই ভাই দিব্যেন্দু তথা তমলুকের বিদায়ী সাংসদও লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আরও এক ভাই সৌমেন্দু এবার পদ্ম প্রতীকে কাঁথি কেন্দ্র থেকে লড়বেন। এবার ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন না শুভেন্দুর বাবা তথা কাঁথির বিদায়ী সাংসদ শিশির। তবে তিনিও মনেপ্রাণে বিজেপিতেই। তমলুক, কাঁথির মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অধিকারীদের দাপটের কথা সর্বজনবিদিত। তাই এবছরের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের লড়াই তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জের মতোই। আবার প্রথমবার সেখানে পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপি।
কবে ভোট?
লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে তমলুক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ।
তমলুকের লড়াইয়ে কারা?
এবছর তমলুকে প্রার্থীতালিকায় চমক দিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, বাম, সব দলই। পদ্মপ্রতীকে লড়ছেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে অভিজিৎ। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তাঁর বিপরীতে লড়ছেন তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। অন্য দিকে, বামেদের প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত তমলুক কে দখল করেন, সেই উত্তর মিলবে ৪ জুন।