যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তেমনটাই হল। বারাকপুরে অর্জুন সিংয়ের উপরেই আস্থা রাখল বিজেপি। আর উত্তর কলকাতায় প্রার্থী হলেন তাপস রায়। দু'জনেই ক'দিন আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপিতে যোগ দিয়েই কৃষ্ণনগরের টিকিট পেলেন রানিমা অমৃতা রায়।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে দলবদল করেছিলেন অর্জুন সিং। বারাকপুরে বিজেপির টিকিট পেয়েছিলেন। জিতেওছিলেন। ২০২১ সালে তৃণমূল আসে ক্ষমতায়। তার পরই প্রত্যাবর্তন পুরনো দলে। কিন্তু, লোকসভা ভোটের আগেই বাধল গোল! বারাকপুরে পার্থ ভৌমিককে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যা নিয়ে গোঁসা হয় অর্জুনের। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বারাকপুরে তিনিই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। যোগ দেন বিজেপিতে। শোনা যায়, অর্জুনকে দলে ফেরানো নিয়ে আপত্তি ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারী অর্জুনকে চেয়েছিলেন। আসলে বারাকপুরে বিজেপির সেই সংগঠন নেই যা দিয়ে ওই আসন জেতা সম্ভব। সম্ভবত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তা ঠাওর করেছিলেন। সে কারণেই অর্জুনের জন্য দরজা খোলা হয়। অর্জুন ফের তির নিশানায় ছুড়তে পারেন কিনা তা জানা যাবে জুন মাসের শুরুতেই।
উত্তর কলকাতায় তাপস রায়ের বিজেপিতে যোগদানকে বলা যেতে রিয়েলিটি শোয়ে শেষ বেলায় ওয়াইল্ডকার্ড এন্ট্রি। তাপস রায় কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন সামলেছেন। তার পর তৃণমূল বিধায়ক হয়েছেন। উত্তর কলকাতায় লোকসভার প্রার্থী হওয়ার অভিলাষও তাঁর ছিল। কিন্তু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করে তৃণমূল। সুদীপ ও তাপসের সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। সুদীপকে প্রধানমন্ত্রীর লোক বলেও আক্রমণ করেছিলেন তাপস। বিজেপির উত্তর কলকাতার নেতৃত্বও তাপসকে চেয়েছিলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, উত্তর কলকাতায় তাপসের মতো বর্ষীয়ান নেতা আসলে আখেরে বিজেপির লাভ হবে। উত্তর কলকাতায় তাই তাপস বনাম সুদীপ ডুয়েল এবার। যে লড়াই রাজনীতি ছাপিয়ে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া বলেও মত অনেকের।
কৃষ্ণনগর আসনে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী দাঁড় করাতে চেয়েছিল। এজন্য অনেকের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু যুৎসই প্রার্থী মিলছিল না। ঝুলন গোস্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিজেপি নেতারা। তবে তিনি প্রার্থী হতে চাননি। কথা হয় বলিউডের এক বাঙালি গায়কের সঙ্গেও। তিনি রাজি হননি। শেষমেশ কৃষ্ণনগরের রানিমা অমৃতা রায়ের নামেই পড়ল সিলমোহর। দিন কয়েক আগেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তিনিই হবেন কৃষ্ণনগরের প্রার্থী। কৃষ্ণনগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারকে নিয়ে এখনও মানুষের আবেগ। সেই আবেগেই ভরসা রাখল বিজেপি। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ রাজা-রাজমাতারা ভোটের ময়দানে নামেন, এবং সাফল্যও পান। প্রকৃষ্ট উদাহরণ, মধ্যপ্রদেশের সিন্ধিয়া পরিবার। বাংলাতেও কি সেই আবেগ কাজ করবে? সেটা বলবে ইভিএমের ফল।